Advertisement
E-Paper

নাতনির চিৎকার শুনেও ওরা কিছু করেনি!

বাথরুম থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বাতাসে পোড়া গন্ধ। সঙ্গে নাতনির কচি গলায় আর্তনাদ। অথচ, বাইরে দাওয়ায় ‘নির্বিকার’ বসে রয়েছেন ঠাকুরদা-ঠাকুমা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
কুরসুনা ইয়াসমিন (বাঁদিকে) ও মনিরা বেগম (ডানদিকে)।—নিজস্ব চিত্র

কুরসুনা ইয়াসমিন (বাঁদিকে) ও মনিরা বেগম (ডানদিকে)।—নিজস্ব চিত্র

বাথরুম থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বাতাসে পোড়া গন্ধ। সঙ্গে নাতনির কচি গলায় আর্তনাদ। অথচ, বাইরে দাওয়ায় ‘নির্বিকার’ বসে রয়েছেন ঠাকুরদা-ঠাকুমা।

বুধবার বর্ধমানের মেমারির বিজরা গ্রামে ওই চিৎকার শুনেই ছুটে গিয়ে পড়শিরা দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন কুরসুনা ইয়াসমিন (৩) ও তার মা মনিরা বেগমকে (২৭)। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে বাঁচেননি মা-মেয়ে। তাঁদের পুড়িয়ে মারার অভিযোগে মনিরার শ্বশুর শেখ সামাদ, শাশুড়ি তহমিনা বিবিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই অভিযোগ দায়ের হয়েছে মনিরার স্বামী কুরবান শেখ, ননদ নার্গিস বেগম ও দেওর শেখ রাজার বিরুদ্ধে। তবে তাঁরা পলাতক। মনিরার বাবা, হুগলির পাণ্ডুয়ার মাগুরা গ্রামের নুরউল্লা মিঞার ক্ষোভ, ‘‘টাকার জন্যই আমার মেয়ে-নাতনিকে মেরে ফেলল ওরা!’’

বছর পাঁচেক আগে কুরবান শেখের সঙ্গে মনিরার বিয়ে হয়। কুরবান ও তাঁর ভাই হায়দরাবাদে গয়নার দোকানে কাজ করেন। মনিরার বাপের বাড়ির আত্মীয়দের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই চাহিদা মতো পণ না পাওয়ার অজুহাতে মনিরার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মেয়ে হওয়ার পরে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে। মাঝেমধ্যেই বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া হতো। না মানলে চলত মারধর। নুরউল্লার দাবি, ‘‘জামাই এক মাস আগে আমাদের বাড়ি এসে ১২ হাজার টাকার জন্য চাপ দেয়। মেয়ের কথা ভেবে টাকার জোগাড় করব বলেছিলাম। তার পরেও এই ঘটনা!’’

মনিরার মাসি শাকিলা বিবির দাবি, “মৃত্যুর আগে মনিরা আমাদের বলে গিয়েছে, বুধবার সকাল থেকেই টাকা চাওয়া নিয়ে ওর সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ির তুমুল অশান্তি হচ্ছিল। ওকে আর কুরসুনাকে হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পড়শিরা আমাদের বলেছেন, বাচ্চাটা বারবার ঠাকুমাকে ডাকছিল।’’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের কাছে মনিরা বেগম কী জবানবন্দি দিয়েছেন, সেটা দেখা হচ্ছে। মেমারি থানার ওসিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিশদ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়িকে ধরা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সকালে কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল কুরবানের। রওনা হলেও ঘটনা শোনার পরেই তিনি মেমারিতে ফিরে আসেন। তবে বুধবার রাতে মনিরার মৃত্যুর খবর মেলার পর থেকে তিনি নিখোঁজ।

ঘটনার তদন্তে বৃহস্পতিবার বিজরা গ্রামে যায় পুলিশ। পুলিশকর্মীদের সামনে পেয়ে সামাদ ও তহমিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসী। বলেন, ‘‘নাতনির অমন চিৎকার শুনেও যারা কিছু না করে বসে থাকতে পারে, তাদের শাস্তি দেবেন স্যার!’’

Fire Daughter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy