E-Paper

মজুত বালির চালান দেখিয়ে চলছে পাচার

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বালি চুরির প্রসঙ্গে পাণ্ডবেশ্বর এলাকার গৌতম ঘোষের নামে অভিযোগ তোলেন সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৮
বালির ঘাট। হিরাপুরে দামোদরে। নিজস্ব চিত্র

বালির ঘাট। হিরাপুরে দামোদরে। নিজস্ব চিত্র

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে, ১ জুলাই থেকে নদনদীতে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর পরেও জেলা জুড়ে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য কমেনি বলে অভিযোগ পশ্চিম বর্ধমানে। ভিন্‌ জেলার বালিঘাটের মজুত বালির চালান ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।‌

পশ্চিম বর্ধমানের দক্ষিণে দামোদর ও উত্তরে অজয়— এই দু’টি নদ থেকেই বালি তোলা হয়। বিরোধীদের দাবি, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরেও বালি তোলা চলছে যথেচ্ছ। অন্ডালের মদনপুরের বাসিন্দা বিজেপি নেতা জয়ন্ত মিশ্রের দাবি, মদনপুরে দামোদরে প্রতি সন্ধ্যায় এক দিকে পুরুষ-মহিলারা বালি তুলে বস্তাবন্দি করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো করেন। সেখান থেকে ট্রাক্টরে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়। আবার, রাত বাড়তেই পাম্প বসানো নৌকা নামিয়ে বালি তুলে ট্রাকে বোঝাই করে পাচার করা হচ্ছে।‌ ভোর পর্যন্ত এই কার্যকলাপ চলে, অভিযোগ তাঁর।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বালি চুরির প্রসঙ্গে পাণ্ডবেশ্বর এলাকার গৌতম ঘোষের নামে অভিযোগ তোলেন সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, গৌতম তৃণমূলের গোগলা অঞ্চল সভাপতি। গৌরবাজার-মাধাইপুর এলাকায় অজয়ে পাঁচটি বালিঘাট আছে। এর মধ্যে দু’টি ঘাটে ১ জুলাইয়ের আগে তোলা বালি মজুত করে রাখার অনুমতি আছে। জিতেন্দ্রর অভিযোগ, বাকি তিনটি ঘাটে অবৈধ ভাবে নৌকা ও যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। মজুত বালির চালান বার বার ব্যবহার করে বেআইনি বালি পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া, বীরভূমের চালান দেখিয়েও বালি পাচার ঢলছে বলে অভিযোগ। গৌতমের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নিজে দুর্নীতিগ্রস্ত, তদন্তের ভয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ হাস্যকর।’’

স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রে অজয়ের রুনাকুড়া ঘাটের উল্টো দিকে ঝাড়খণ্ডের নলা জেলায় একই ভাবে বালি তুলে এ পারে নিয়ে এসে অন্য জেলার চালান ব্যবহার করে পাচার করা হচ্ছে। দামোদরে আসানসোল দক্ষিণের ‌ডামরা, হিরাপুরের চাপড়া (পাটমোহনা) বালিঘাটে একই পদ্ধতিতে বালি তুলে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সম্প্রতি জেলার পুলিশ-প্রশাসনকে অজয় ও দামোদরের কালাঝরিয়া-সহ বিভিন্ন ঘাটে অবাধে বালি তুলে, মজুত বালির চালান ব্যবহার করে পাচার করা হচ্ছে বলে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের কাছে এই অবৈধ কারবার বন্ধের ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছেন। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রবীর মণ্ডলের অভিযোগ, দু’টি নদের গতিপথ বিভিন্ন এলাকায় বালি তোলার ফলে ইতিমধ্যেই পাল্টাতে শুরু করেছে। শাসক দলের মদত ছাড়া এ বাবে বেআইনি কারবার চলতে পারে না বলে অভিযোগ তাঁদের। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ভি শিবদাসনের যদিও দাবি, প্রশাসনের তৎপরতায় অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তার ফল‌ও মিলছে।

প্রশাসন সূত্রের দাবি, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতি বছর বর্ষার জন্য ১ জুলাই থেকে‌ বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। প্রায় তিন মাস পরে ফের অনুমতি দেওয়া হয়। ১ জুলাইয়ের আগে যারা বালি তুলে করে ঘাটের কাছাকাছি মজুত করে রেখেছে, তাদের এই সময়ে মজুত বালি বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়। বালি কারবারিদের একাংশের দাবি, মজুত বালির চালান নিতে গিয়ে প্রতি ঘনফুটের জন্য ১৬ টাকা দিতে হচ্ছে।‌ এর পরে এই বালি ৫৪ টাকা প্রতি ঘনফুট হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালি ব্যবসায়ীর দাবি, একটি ১৬ চাকার ট্রাকে ৭৫০ ঘনফুট বালি বোঝাই হয়। তাতে চালান বাবদই ১২ হাজার টাকা দিতে হয়। এর পরে বিক্রি হয় ৪০,৫০০ টাকায়।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দামোদর ও অজয় নদে‌ বালি তোলার অভিযোগ পেয়েছেন।‌ তবে দামোদরের ক্ষেত্রে বাঁকুড়া এবং অজয়ের ক্ষেত্রে বীরভূম জেলা নিয়ন্ত্রিত ঘাট থেকেই এ সব চলছে বলে অভিযোগ। দুই জেলা প্রশাসনকে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raniganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy