যানজট এই শহরের নিত্য চিত্র। ছবি: শৈলেন সরকার।
একশো বছরেরও বেশি আগে ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছিল জনপদ। এর সঙ্গে আশপাশে নানা কয়লা খনি চালু হওয়ায় মানুষজনের আনাগোনা বাড়ে। কারখানা ও খনিকে কেন্দ্র করে কুলটি শহর তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন জনবসতি গড়ে উঠেছে। ব্যবসা কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে এই শহর। কিন্তু নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য মেলে না বলে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের।
শহরের অনেকেরই মতে, প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ এসে বসবাস করতে শুরু করেছেন। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই জনবসতি তৈরি হয়েছে। তাই নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ২১ বছর আগে কুলটি পুরসভা তৈরি হলেও হাল খুব একটা পাল্টেছে বলে মনে করেন না শহরবাসী।
কুলটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অন্যতম কেন্দ্র বরাকর। রাজ্যের সীমানায় এই এলাকায় ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, মিহিজাম, জামতাড়ার বাসিন্দারাও নিয়মিত কেনাকাটা করতে আসেন। তাই মানুষজনের যাতায়াতের চাপ রয়েছে রীতিমতো। পরিকল্পনায় ত্রুটি ও চরম অব্যবস্থা সেই চাপ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। শহরের অন্যতম বড় অসুবিধা হল গাড়ি রাখার জায়গার অভাব। দোকান-বাজারে আসা মানুষজনের জন্য শহরের কোথাও গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা নেই। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন মূল রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি রাখতে বাধ্য হন। তাতে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যানজটও হয়।
বেগুনিয়া মোড় ও স্টেশন রোড এলাকায় এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। দিনের ব্যস্ত সময়ে এই দুই এলাকা দিয়ে গাড়ির চাকা এগোতে চায় না। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশও হিমসিম খায়। শহর যানজট মুক্ত রাখতে বেশ কয়েক বার পুলিশের তরফে যেখানে-সেখানে গাড়ি রাখার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গাড়ির মালিকদের জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেই দাবি উঠেছে, তৈরি করে দেওয়া হোক গাড়ি রাখার উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু পুরসভা এখনও তা তৈরি করে দিতে পারেনি। ব্যবসা মার খাওয়ার অভিযোগ তুলে এলাকার ব্যবসায়ীরাও পুলিশের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। ফলে, পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
এই শহরের উপর দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, ভিন্ রাজ্যেরও বহু যানবাহন যাতায়াত করে। সে কারণে রাজ্য সরকারের তরফে ১৯৯০ সালে বরাকরে একটি সিটি বাসস্ট্যান্ড বানানো হয়। কথা ছিল, ছোট-বড় সব রকম যাত্রিবাহী যানবাহন সেখানে দাঁড়াবে। কিন্তু বছর দশেক আগে থেকে সেই বাসস্ট্যান্ড চলে গিয়েছে সব্জি, ফল ও মাছ বিক্রেতাদের দখলে। অস্থায়ী ছাউনিতে চা, তেলেভাজা, পান, সিগারেটের ব্যবসা চলছে। ফলে, যানবাহন দাঁড়ানোর জায়গা হয়েছে সেই রাস্তায়। রাস্তায় পায়ে চলার কোনও জায়গা নেই। পথচারীদের যাতায়াত করতে হয় চলন্ত গাড়ির গা ঘেঁষেই। তাতে যানজট আরও বাড়ে। ট্রাফিক আইন না মেনে চলায় দুর্ঘটনাও ঘটে বেশি।
একই পরিস্থিতি এলাকার আর এক বাণিজ্যকেন্দ্র নিয়ামতপুরেও। পরিকল্পনার অভাবে সেখানেও ব্যস্ত সময়ে স্টেশন রোড ও লিথুরিয়া রোড দিয়ে যাতায়াত করা দায়। রাস্তার অর্ধেক অংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন, বসে যায় সব্জি ও মাছের বাজার। রাস্তার বেশ কিছুটা দখল করে জিনিস সাজিয়ে রাখেন দোকান মালিকেরা। পথচারীরাও ঠিক মতো যাতায়াত করতে পারেন না। বারবার নানা মহলে অবাঞ্ছিত দখলদারি সরানোর দাবিও জানানো হয়েছে।
নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই আর্জি বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy