Advertisement
E-Paper

ফড়েদের জন্য চালকলকেই দায়ী করলেন মন্ত্রী

চাষি আর বাজারের মাঝে ফড়ের রাজত্ব এখনও বহাল বলে স্বীকার করে নিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে তাঁর দাবি, সিপিএম এবং চালকল মালিকদের একাংশের মদতেই ফড়েরা এখনও বাজারে টিঁকে রয়েছে। শুক্রবার বর্ধমান জেলা পরিষদের অঙ্গীকার ভবনে সহায়ক মূল্যে বোরো ধান কেনা নিয়ে প্রশাসনের কর্তা ও চালকল মালিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০২:৪৭
বৈঠকের পরে চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর কথা।—নিজস্ব চিত্র।

বৈঠকের পরে চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর কথা।—নিজস্ব চিত্র।

চাষি আর বাজারের মাঝে ফড়ের রাজত্ব এখনও বহাল বলে স্বীকার করে নিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে তাঁর দাবি, সিপিএম এবং চালকল মালিকদের একাংশের মদতেই ফড়েরা এখনও বাজারে টিঁকে রয়েছে।

শুক্রবার বর্ধমান জেলা পরিষদের অঙ্গীকার ভবনে সহায়ক মূল্যে বোরো ধান কেনা নিয়ে প্রশাসনের কর্তা ও চালকল মালিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। ছিলেন খাদ্য দফতরের সচিব অনিল বর্মা, বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু, বিভিন্ন ব্লকের বিডিও এবং চালকল মালিকেরাও।

পরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ফড়েরা এখনও সক্রিয় রয়েছে। গত চার বছর ধরে তাদের সরিয়ে সরাসরি ধান কেনার জন্য প্রশাসনকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু সিপিএমের মদতে এই ফড়ে বা মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা এখনও রয়েছে।” বৈঠক সেরে কলকাতার দিকে রওনা দেওয়ার সময়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুর সামনেই চালকল মালিকদের তিনি বলেন, “আপনাদের জন্যই ফড়েরা এখনও টিঁকে রয়েছে!” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক অবশ্য পাল্টা বলেন, “সরকার সক্রিয় থাকলে ফড়েরা কখনও সুযোগ পায়? সরকার কৃষকবিরোধী বলেই তো ফড়েরা টিঁকে আছে!”

প্রশাসন সূত্রের খবর, ফড়েদের সঙ্গে চালকল মালিকদের একাংশের যোগাযোগ রয়েছে বলে এ দিন বৈঠকে জানিয়েছেন বেশ কিছু বিডিও। গলসির বিডিও মন্ত্রীকে জানান, খরিফ মরসুমে ধানের শিবির খোলা হয়েছিল। সেখানে চাষিরা বিশেষ ধান বিক্রি করেননি, আবার মিল মালিকদের কাছেও তাঁরা ধান বিক্রি করেছেন, এমন নজির নেই। অথচ চালকল মালিকেরা সরকারের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে লেভি জমা দিয়েছে। বর্ধমান ১-এর বিডিও অভিযোগ করেন, অনেক চালকল মালিক খোলা বাজার থেকে চাল কিনে সরকারের কাছে লেভি জমা দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

বেশ কয়েক জন বিডিও অভিযোগ করেন, চালকল মালিকেরা ‘টাকা নেই’ বলে চাষিদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন, অথচ ফড়েদের কাছে নগদ টাকায় চাল কিনছেন। মন্ত্রী উত্তেজিত ভাবে চালকল মালিকদের বলেন, “আমার কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। আপনাদের সরাসরি চাষিদের থেকেই ধান কিনতে হবে।” গত বুধবার বর্ধমান জেলা চালকল সমিতি জেলা খাদ্য নিয়ামককে যে স্মারকলিপি দেয়, তাতেও একই দাবি তোলা হয়েছিল। খাদ্য দফতরের সচিব জানান, বর্ধমান জেলায় ১৩টি কিসান মান্ডি মারফত চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনা হবে। যাতায়াত বাবদ কুইণ্টাল প্রতি অতিরিক্ত ১৫ টাকা করে পাবেন চাষিরা। এই সপ্তাহ থেকেই প্রতিটি ব্লকে তিন-চারটি করে শিবির হবে।

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদক জেলা বর্ধমানে লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২,৬০,০০০ মেট্রিক টন। গত এপ্রিল পর্যন্ত ১,০১, ৬৬১ মেট্রিক টন লেভি আদায় হয়েছে। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, সমস্ত গুদামে চাল মজুত রয়েছে। সেই চাল না বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত নতুন করে লেভি নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে চাল মজুতের সমস্যা সামাল দিতে আউশগ্রাম ২, বারাবনি, ভাতার, খণ্ডঘোষ, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী ২, মন্তেশ্বর, রায়না ১ ও ২, কাটোয়া ২ ও বর্ধমান ২ ব্লকে জায়গা কিনে গুদাম ঘর তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ এসেছে, চালকল মালিকেরা তিরিশ বস্তার বেশি ধান কিনতে অস্বীকার করছে। চাষিরা বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তা শুনে চালকল মালিকদের মন্ত্রী বলেন, “এ রকম কোনও নির্দেশ খাদ্য দফতরের নেই।” জেলা চালকল সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক পাল্টা বলেন, “আমাদের কাছে ওই রকম নির্দেশ রয়েছে। আপনার নির্দেশে চাল কিনতে হলে তো সেই ফড়েদেরই বাড়বাড়ন্ত হবে। চাষির ঘরে তো আর ২০০ বস্তা ধান থাকে না!”

এ দিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পূর্বস্থলীতে দু’টি, ভাতারে দু’টি, মেমারিতে তিনটি, আউশগ্রামে পাঁচটি, মন্তেশ্বরে চারটি এবং কাটোয়া ও মঙ্গলকোটে একটি করে মোট ১৮টি চালকলের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, “চালকল থেকে কিসান মান্ডি পর্যন্ত চাল নিয়ে যাওয়ার খরচ দেয় খাদ্য দফতর। তা-ও ওই সব চালকলগুলি দু’এক দিনের বেশি চাল সংগ্রহ করেনি। সেই কারণেই জেলাশাসককে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

soumen dutta rice mill jyotipriya mallick food minister trinamool tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy