Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ধসের পরে ফের অবৈধ খনন নিয়ে চাপানউতোর সাতগ্রামে

অবৈধ খননের জেরে বিপন্ন এলাকা, বাম আমলে জামুড়িয়ার সাতগ্রাম নিয়ে এমন অভিযোগ বারবার তুলেছিল বিরোধীরা। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরেও এই এলাকায় সেই আশঙ্কা যে কাটেনি, শনিবার এক অবৈধ খনিতে ধসে তা ফের সামনে এল।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০১:৩৬
Share: Save:

অবৈধ খননের জেরে বিপন্ন এলাকা, বাম আমলে জামুড়িয়ার সাতগ্রাম নিয়ে এমন অভিযোগ বারবার তুলেছিল বিরোধীরা। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরেও এই এলাকায় সেই আশঙ্কা যে কাটেনি, শনিবার এক অবৈধ খনিতে ধসে তা ফের সামনে এল।

সাতগ্রামে শনিবার সকালে অবৈধ খনিতে ধসের খবর চাউর হতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, এই এলাকায় বছর সাতেক আগে পরপর সাতটি অবৈধ খনিমুখে ধোঁয়া বেরোনোর পরে আগুন ধরে গিয়েছিল। বেআইনি কয়লা কারবার নিয়ে সরব হয় নানা পক্ষ। এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালিন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। ২০০৯ সালে তৃণমূল সাংসদ তথা কয়লা ও ইস্পাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে এলাকা ঘুরে অবৈধ খনিতে আর কয়লা কাটা হচ্ছে কি না, তা দেখে যান। তিনি এই এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবারের জন্য রাজ্যে তখন ক্ষমতায় থাকা সিপিএমকেই দায়ী করেছিলেন।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, সেই সময়ে এই এলাকায় কয়লা কারবারের রাশ যাঁর হাতে ছিল, সেই মঙ্গল বাউরি সিপিএম নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে বেশ কিছু অবৈধ খনিমুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল। মাঝে-মধ্যে চোরা পথে অবশ্য অবৈধ কয়লার কারবার চলছিল। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে আবার মঙ্গলের ঘনিষ্ঠ চিন্টু, প্রকাশ ও বাবন নামে জনা কয়েকের নেতৃত্বে বন্ধ করে দেওয়া খনিমুখগুলি খুলে কারবার শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লরি বোঝাই করে কয়লা নানা এলাকায় পাঠানো হয়েছে। এমনকী, রাতে একাংশ পুলিশকর্মীকে কয়লার লরি পারাপারের সময় টাকা আদায় করতে দেখা যায় বলেও দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বাসিন্দা। তাঁদের কথায়, “রাজ্যে পালাবদলের পরে আর কয়লা কারবার চলতে দেওয়া হবে না বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে পুরনো কারবারিদের ঘনিষ্ঠরা ফের তা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক দল, পুলিশ ও কয়লা মাফিয়াদের আঁতাতে আগেও আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারতাম না। এখনও সে ভাবেই মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হচ্ছে।”

বাসিন্দাদের একটি অংশের দাবি, সাতগ্রামেই আর একটি বেআইনি কয়লার ডিপো চলে বিরজু নামে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে। তিনি আবার তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি। লাগোয়া একটি কোলিয়ারির সাইডিং থেকে চুরি করা কয়লা ওই ডিপোয় মজুত করার পরে তা রাতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সড়কের অদূরে দিনের বেলায় ডিপো খোলা থাকলেও পুলিশের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।

তাঁদের আমলে দলের সঙ্গে কয়লা কারবারিদের ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর পাল্টা অভিযোগে ‘‘ইসিএলের একাংশ, পুলিশ, তৃণমূল ও কয়লা চোরেদের মধ্যে আঁতাত তৈরি হয়েছে। তার জেরেই এমন ঘটছে।’’ শনিবার ধসের ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দা তথা যুব তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক কোর কমিটির সদস্য সত্যজিৎ অধিকারীর বক্তব্য, “বারবার পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এ বার আমরা প্রয়োজনে পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।”

তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের আমলেই কয়লা কারবার বন্ধ হয়েছে। সাতগ্রামের ঘটনার পরে পুলিশকে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ পুলিশেরও দাবি, যখন যেখানে বেআইনি খনন বা পাচারের খবর মেলে, অভিযান চালানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Landslide Jamuria satgram coal mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE