Advertisement
E-Paper

‘হোক প্রতিবাদ’ লিফলেট বিলি, ধৃত ৬ পড়ুয়া

ফল প্রকাশ নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খামখেয়ালিপনা’-র বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলি করছিলেন ছয় ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রও, যিনি ‘হোক কলরব’ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। অভিযোগ, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ-পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা ওই ছয়জনকে তাদের দফতরে ঢুকিয়ে আটকে রাখে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৮

ফল প্রকাশ নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খামখেয়ালিপনা’-র বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলি করছিলেন ছয় ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রও, যিনি ‘হোক কলরব’ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। অভিযোগ, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ-পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা ওই ছয়জনকে তাদের দফতরে ঢুকিয়ে আটকে রাখে। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় তাঁদের।

পুলিশসূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা, নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, ছাত্রছাত্রীদের হুমকি ও কটূক্তির অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ও রেজিস্ট্রার রজত ভট্টাচার্য মন্তব্য করতে চাননি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের পার্ট ২ পরীক্ষার প্রায় ন’মাস পরে যে ফল বেরোয়, তাতে ভুরিভুরি ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাতে সামিল হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়াও।

এ দিন দুপুরে এক দল ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাসে ঢুকে ‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে হোক প্রতিবাদ’ শীর্ষক লিফলেট বিলি শুরু করেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে থাকা ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা এসে বাধা দেন। দু’পক্ষের বচসা বাধে। লিফলেট বিলি করতে-যাওয়া পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁদের ছাত্র সংসদ অফিসে নিয়ে গিয়ে গালিগালাজ ও মারধর করা হয়।

পুলিশ ওই ছ’জন ছাত্রকে থানায় নিয়ে যায়। ঘণ্টা চারেক তাঁদের বসিয়ে রাখার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার দীপেন্দ্রনাথ দে অভিযোগ দায়ের করলে সৈকত শীট, সৌরভ পাল, আকাশ যশ, শুভম গুইন, দীপঙ্কর দে ও সায়ন্তন মণ্ডল নামে ওই ছয় ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে যাদবপুরের ছাত্র সৈকত অভিযোগ করেন, ‘‘একটি ঘরে আটকে জোর করে মুচলেকা লেখানো হয়েছে, আমি বহিরাগত, আর কোনও দিন এখানে আসব না।”

ওই ছয় ছাত্রের গ্রেফতারের খবর আসতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যাদবপুরেও। শুক্রবার সন্ধ্যায় যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিল ও খানিকক্ষণ পথ অবরোধ করেন এক দল ছাত্র। আজ, শনিবার বর্ধমানে একটি মিছিল হওয়ার কথা। সেখানেও তাঁরা অনেকে থাকবেন বলে জানান যাদবপুরের ছাত্ররা।

যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্র সংসদ ফেটসু-র চেয়ারপার্সন শুভব্রত দত্তের অভিযোগ, ‘‘বর্ধমানে ফল নিয়ে কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে যে অরাজনৈতিক লড়াই চলছিল, তার পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিল আমাদের কয়েক জন সহপাঠী। কিন্তু তাঁদের উপরে যে ভাবে তৃণমূলের গুন্ডারা আক্রমণ করল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে যে ভাবে তাদের পুলিশ গ্রেফতার করল, তার প্রতিবাদের ভাষা নেই।’’

থানার বাইরে দাঁড়িয়ে বর্ধমান রাজ কলেজের ছাত্র, তথা আন্দোলনে যোগ দেওয়া শেখ রেহান বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলায় আমরা অরাজনৈতিক ভাবে আন্দোলন করছি। শুধু বর্ধমান নয়, দুর্গাপুর, হুগলি, আসানসোলেও লিফলেট বিলির কথা ছিল। কিন্তু গোলাপবাগে টিএমসিপি বাধা দিল।” লিফলেট বিলি করতে আসা বর্ধমান উইমেন্স কলেজের ছাত্রী প্রগতি সাহা বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। তা সত্ত্বেও টিএমসিপি-র কর্মীরা আমাদের হেনস্থা করল।’’

ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র আমিরুল ইসলামের দাবি, ‘‘ফলে ভুল নিয়ে স্মারকলিপি না দিয়ে এক দল বহিরাগত লিফলেট বিলি করছিল। আমরা তাদের পরিচয় ও কার অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকেছে তা জানতে চাই। এক জায়গায় বসিয়ে রেখে লিফলেট বিলি বন্ধ করি।” আর এক টিএমসিপি নেতা সন্তু ঘোষ দাবি করেন, ‘‘মারধর তো দূর, ওদের চা-মিষ্টি খেতে বলেছিলাম।”

তবে বর্ধমানের ছাত্র আন্দোলনে ‘হোক কলরব’-এর ছোঁয়া যে টিএমসিপি-র অস্বস্তি তৈরি করেছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের কথায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হোক কলরব’ আন্দোলন যে পদ্ধতিতে হয়েছে, তার নিন্দার ভাষা নেই। তাঁরা বাংলার যে প্রান্তেই যাবেন টিএমসিপি বিক্ষোভ দেখাবে। এ দিনও তাই হয়েছে।’’

গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। রেজিস্ট্রার রজত ভট্টাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলুন।’’ উপাচার্য স্মৃতিকুমারবাবু ও সহ-উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ কোনও কথাই বলতে চাননি। প্রতিষ্ঠানের সকলে অবশ্য ছাত্রদের গ্রেফতার পছন্দ করছেন না। অর্থনীতির অধ্যাপক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হতে পারে বাইরের কেউ ছিলেন, তবে তাঁরাও তো ছাত্র। পড়ুয়াদের যে কোনও আন্দোলনে গ্রেফতারি নিন্দনীয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তরফের দাবি, বড় বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এমন পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে এই পদক্ষেপের ফলে গোলযোগ আরও বাড়বে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরে হামলা চালিয়ে যেমন তাঁকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে তৃণমূল, তেমনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করল।’’

Leaflet Hok Protibad Burdwan university jadavpur university student congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy