বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির। নিজস্ব চিত্র।
মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডে শাসক দলের কয়েক জনকে আমন্ত্রিত সদস্য করার জন্য চাপ দিচ্ছেন বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের দৈনন্দিন কাজকর্মে ‘খবরদারি’ করছেন তৃণমূলের কয়েক জন— সম্প্রতি বোর্ডের সম্পাদক শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এমনই অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে।
শ্যামলেন্দুবাবু সম্প্রতি পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালকে চিঠি দিয়ে দাবি করেন, ‘‘সর্বমঙ্গলা মন্দিরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করুন। মন্দিরকে অসাধু ব্যক্তিদের হাত থেকে বাঁচান। ওই ব্যক্তিরা যাতে নিয়মকে অমান্য করে ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য না হতে পারে, তার ব্যবস্থা করুন।” ওই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে জেলার দুই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও মলয় ঘটককেও। জেলাশাসকের কাছেও বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার দাবি জানানো হবে বলে জানান শ্যামলেন্দুবাবু। কেন এমন চিঠি দিলেন? শ্যামলেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘মন্দির চত্বরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে আশঙ্কা করেই চিঠি দিয়েছি।’’
পুরপ্রধান এবং শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। যেমন শ্যামলেন্দুবাবু জানান, তৃণমূল সমর্থিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনের নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তিন জন গত ১৯ জুলাই পুরোহিতদের হুমকি, ধাক্কাধাক্কি করেন। পুরোহিতেরা ঘটনার কথা বর্ধমান থানায় জানান। আরও অভিযোগ, শ্যামাপ্রসাদবাবু-সহ অনেকেই মন্দির চত্বরের জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, মন্দিরের সামগ্রী চুরিতেও তাঁদের মদত রয়েছে।
পুরোহিতদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৯ সালে মহারাজা উদয়চন্দ মহতাব সর্বমঙ্গলা মন্দির পরিচালনার জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। কারা কারা সেই বোর্ডের সদস্য হবেন, তারও নির্দেশনামা করে নিবন্ধীকরণ করে যান। শ্যামলেন্দুবাবুর দাবি, ওই নির্দেশনামা-দলিল অনুসারে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হবেন বর্ধমানের পুরপ্রধান। বাকি পাঁচ সদস্যের মধ্যে থাকবেন দু’জন পুরোহিত। ওই নির্দেশনামায় অতিরিক্ত স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনও সদস্য নিয়োগের সংস্থান নেই।
অথচ সেই নির্দেশ না মেনে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি স্বরূপবাবু তৃণমূল নেতা খোকন দাসকে নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ করেন শ্যামলেন্দু। যদিও এই বিষয়টি বর্তমানে বর্ধমান জেলা আদালতের বিচারাধীন। শ্যামলেন্দুবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘নিয়ম না মেনে স্বরূপবাবু মন্দির দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ অসামাজিক কাজে যুক্ত রয়েছেন।” গত ১০ সেপ্টেম্বর বোর্ডের সভায় স্বরূপবাবু ওই অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়েই হাজির হন এবং তাঁদেরকে আমন্ত্রিত সদস্য করার জন্য চাপও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
শ্যামাপ্রসাদবাবুরা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুরপ্রধান স্বরূপবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘মন্দিরের উন্নয়নের কাজ চলছে। সেই কাজ দেখার জন্যই স্থানীয়দের আমন্ত্রিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কোনও চাপ দিইনি।” পুলিশ সুপার এবং মন্ত্রীরা, কী ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy