Advertisement
E-Paper

ঝুল জমছে বইয়ে, ধুঁকছে স্কুল-গ্রন্থাগার

লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি’— এ কথা বলেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর স্কুলের গ্রন্থাগার সবকিছুর শুরু। স্কুল-গ্রন্থাগারের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, সেখানে ছেলেবেলায় বারবার ছুটে গিয়েছেন বিষ্ণু দে, হরিনাথ দে, নীহাররঞ্জন রায়দের বহু কৃতী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
বর্ধমানের স্কুলে তালা বন্ধ গ্রন্থাগার। ছবি: উদিত সিংহ।

বর্ধমানের স্কুলে তালা বন্ধ গ্রন্থাগার। ছবি: উদিত সিংহ।

লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি’— এ কথা বলেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর স্কুলের গ্রন্থাগার সবকিছুর শুরু। স্কুল-গ্রন্থাগারের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, সেখানে ছেলেবেলায় বারবার ছুটে গিয়েছেন বিষ্ণু দে, হরিনাথ দে, নীহাররঞ্জন রায়দের বহু কৃতী। কিন্তু স্কুল গ্রন্থাগারগুলিই বর্তমানে ধুঁকছে। সম্প্রতি বর্ধমানে জেলা ও মহকুমা স্তরে গঠিত ‘মনিটরিং কমিটি’র দেওয়া রিপোর্টে অন্তত তেমন তথ্যই দেওয়া হয়েছে।

জেলার স্কুল গ্রন্থাগারগুলির বিষয়ে মূলত তিন রকমের ছবি উঠে এসেছে কমিটির রিপোর্টে।

চিত্র এক: সর্বশিক্ষা মিশন থেকে জেলার প্রতিটি স্কুলকে গ্রন্থাগার তৈরির জন্য মোটা অঙ্কের অনুদান দেওয়া হয়েছিল। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন ও জেলা পরিদর্শক দফতর (মাধ্যমিক) সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রন্থাগার তৈরির জন্য জেলার ৬৬৮টি স্কুলকে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। বই কেনা হলেও তা নির্দিষ্ট ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। এর জেরে পাঠ্যক্রমভুক্ত বা সহায়ক বই থাকলেও তা পড়ুয়াদের হাতে আসছে না।

চিত্র দুই: চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত খাতায়-কলমে ৩১৬টি স্কুলে গ্রন্থাগার রয়েছে। তবে তার অর্ধেকের বেশি স্কুলে গ্রন্থাগারের তালা খোলে না। স্কুল শিক্ষকদের একাংশই জানান, এই পরিস্থিতিতে গ্রন্থাগারের আলমারিতে ঝুল জমছে। নষ্ট হচ্ছে অজস্র বই। কমিটির রিপোর্টে জানা গিয়েছে, জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে পুরনো, দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পদক্ষেপ না করায় সেই সব বইপত্রও উইয়ে কাটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সহায়ক গ্রন্থ কিনে তা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সব স্কুলের শিক্ষকেরা বলেন, ‘‘গ্রন্থাগার চালানোর লোক কোথায়, তাই বই তুলে দিয়েছি পড়ুয়াদের হাতে। বছর শেষে পড়ুয়ারা বই স্কুলকে ফেরত দেবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে ফের তা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” তবে এই পদ্ধতিতে স্কুলের সমস্ত পড়ুয়া কতখানি লাভবান হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষামহলের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। কারণ এর জেরে স্কুলের পঞ্চম থেকে দশম— এই পাঁচটি শ্রেণির পড়ুয়ারা আখেরে বঞ্চিত হচ্ছে।

চিত্র তিন: গ্রন্থাগার রয়েছে, গ্রন্থাগারিকও আছে। তারপরেও গ্রন্থাগার ব্যবহারের জন্য পড়ুয়াদের উৎসাহ দিতে ব্যর্থ স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলার ১৯৯টি স্কুল গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিক, দু’টোই রয়েছে। কিন্তু সেই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদেরও গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে অনীহা রয়েছে বলে দাবি ওই রিপোর্টে। আসানসোল, দুর্গাপুরের একাধিক স্কুলের গ্রন্থাগারিক জানান, বছর খানেক ধরেই গ্রন্থাগারে পড়ুয়াদের আনাগোনা বেশ কম। সংখ্যাটা কেমন? এক গ্রন্থাগারিক জানান, আগে যেখানে ফি দিন প্রায় ৫০ জন করে পড়ুয়া আসত, এখন সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে মেরেকেটে দু’-তিন জন।

কাটোয়া, কালনার বেশ কয়েক জন পড়ুয়া আবার জানেই না, স্কুলে গ্রন্থাগার রয়েছে কিনা। কাটোয়ার একটি নামী স্কুলের পড়ুয়া সাবর্ণ হাজরার বক্তব্য, ‘‘স্কুলে গ্রন্থাগার আছে? কই জানি না তো? স্কুলের শিক্ষকরাও কেউ তো কিছু বলেননি!” কালনার একটি স্কুলের গ্রন্থাগারিক আবার গ্রন্থাগারে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস নিতে যান। ক্লাসের রুটিন-চার্টেও রয়েছে তাঁর নাম।

তবে স্কুল গ্রন্থাগারগুলির হাল ফেরাতে নির্দেশিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন ও প্রশাসন। সর্বশিক্ষা অভিযানের জেলার অধিকর্তা তথা জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “গ্রন্থাগারিকদের নিয়ে আমরা একটা কর্মশালা করব। সেখানে কী ভাবে বই রাখতে হয় অথবা পড়ুয়াদের কী ভাবে গ্রন্থাগারে টানা যায়, তা জানানো হবে।’’ বর্ধমান জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরীও বলেন, ‘‘প্রতিটি স্কুলকে গ্রন্থাগার তৈরি করতে হবে। গ্রন্থাগারিক না থাকলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়া কিংবা মা-দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে গ্রন্থাগার পরিচালনা করতে হবে।’’

Library School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy