Advertisement
E-Paper

আলোর খেলা মন্দিরে, নজর পর্যটন-প্রসারেও

আলোয় সেজে উঠবে কালনার ঐতিহ্যপূর্ণ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। এর জন্য রাজ্য পর্যটন দফতরের তরফে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫২ লক্ষ টাকা। কাজটির জন্য পর্যটন দফতর, কালনা পুরসভা ও পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) মধ্যে ইতিমধ্যেই একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। নতুন এই আলোকসজ্জা ব্যবস্থার পরিকল্পনায় রয়েছেন কনিষ্ক সেন। নয়া আলোগুলিকে প্রযুক্তির ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ইনটেলিজেন্ট লাইট’।

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৩
কালনা রাজবাড়ি চত্বরে মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

কালনা রাজবাড়ি চত্বরে মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

আলোয় সেজে উঠবে কালনার ঐতিহ্যপূর্ণ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। এর জন্য রাজ্য পর্যটন দফতরের তরফে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫২ লক্ষ টাকা। কাজটির জন্য পর্যটন দফতর, কালনা পুরসভা ও পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) মধ্যে ইতিমধ্যেই একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

নতুন এই আলোকসজ্জা ব্যবস্থার পরিকল্পনায় রয়েছেন কনিষ্ক সেন। নয়া আলোগুলিকে প্রযুক্তির ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ইনটেলিজেন্ট লাইট’। পরীক্ষামূলক সমীক্ষাও শেষ হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই সন্ধ্যার আলো জ্বলবে মন্দিরচত্বরে। পুরসভার আশা, নতুন ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি সংখ্যক পর্যটক কালনায় আসবেন।

ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়, মূলত বর্ধমানের মহারাজের পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ কয়েকটি মন্দির তৈরি হয় কালনায়। নবকৈলাশ অর্থাত্‌ ১০৮ শিবমন্দিরটি তৈরি হয় ১৮০৯ সালে। মন্দিরের দেওয়ালে জুড়ে দেখা মেলে রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন অনুষঙ্গের ছবি। কালনা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাজবাড়ি চত্বরেও বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। ১৮৪৯-এ তৈরি হয় দেউল ঘরানার প্রতাপেশ্বর মন্দির। পাশের রাসমঞ্চে দেখা মেলে টেরাকোটার কাজ। অদূরে ১৭৫১ থেকে ১৭৫৫ সালের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র, ১৭৩৯-এ লালজি মন্দির তৈরি হয়। দু’টি মন্দিরেই ২৫টি করে চূড়া রয়েছে। কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ ও লালজীতে নারায়ণ, গিরি-গোবর্ধনের পুজো করা হয়। এ ছাড়াও রয়েছে রাম-সীতা, অনন্ত বাসুদেব, বিজয় বদ্রিনাথ প্রমুখ দেবতার মন্দির। নজর কাড়ে রূপেশ্বর, পঞ্চচূড় মন্দিরও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে েয, বছর কয়েক আগে নবকৈলাশ ও রাজবাড়ি মন্দির চত্বরের সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব নেয় এএসআই। নবকৈলাশ সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে গেলেও রাজবাড়ি চত্বর সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা খোলা থাকার কথা। সন্ধ্যের পর রাজবাড়ি চত্বরে যেতে গেলেই পর্যটকদের স্বল্প আলোয় অসুবিধা হত বলে জানান পুর চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ কুণ্ডু। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “আধুনিক আলোকসজ্জার জন্য পর্যটন দফতরের কাছে আবেদন করি। ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। আলোক সংযোগের জন্য আমরা ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বিদ্যুত্‌ দফতরকে দিই। এখন সন্ধ্যার পর পুরো ভোল বদলে যাচ্ছে।”

প্রতাপেশ্বর মন্দির ও রাসমঞ্চে অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান করতে গেলেই ভাড়া করতে হতো জেনারেটর। এখন তার জায়গায় রয়েছে আধুনিক আলোর ব্যবস্থা। পুরসভার আলো ও জল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আনন্দ দত্ত বলেন, “এএসআইয়ের প্রস্তাব ও পরামর্শ মেনেই চলছে কাজ। রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুনন্দ ঠাকুর নামে অভিজ্ঞ কারিগরকে। নানা ঐতিহ্যবাহী স্থানে তিনিই আলোর ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।” ‘ইনটেলিজেন্ট লাইট’ মূলত এলইডি বাতি বলে প্রযুক্তিবিদরা জানান। সুনন্দবাবু বলেন,“কোন অংশের উপর কতটা আলো আসবে, সেটা ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। এএসআইয়ের নির্দেশ মতো কোনও ঐতিহ্য-নির্মাণের উপর বাতিস্তম্ভ লাগানো যায় না।” নির্দেশ অমান্য করায় উদয়গিরি-খণ্ডগিরিতে আলো বসানো কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এতকিছুর মধ্যে প্রধান সমস্যা ভোল্টেজের ওঠানামা নিয়ে। এর জেরে লাইটগুলি নষ্টও হয়ে যেতে পারে। যদিও আনন্দ দত্তের দাবি, “ভোল্টেজের ওঠানামা কম হচ্ছে। কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে নয়া আলো জ্বালানোর চেষ্টা করছি।’’ দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্টেবিলাইজার কেনা হয় বলে জানান বিশ্বজিৎবাবু। দিন সাত-দশের মধ্যে পুরো ব্যবস্থা নিখুঁত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। কালনা চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক সুবোধ নস্কর বলেন, “এএসআই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ফিকে হতে থাকা মন্দির স্বমহিমায় ফিরতে চলেছে।” কালনায় পর্যটন হাব গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলে পুরসভা জানিয়েছে।

State tourism department temple kalna Ashok Sengupta tourist Rajbari Ramayana Mahabharata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy