Advertisement
E-Paper

রাত থেকে বহিরাগতদের ‘দাপাদাপি’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:৫২
অবাধ: খণ্ডঘোষের কেরিলি এলাকার একটি বুথে খোলা জানালার পাশে চলছে ভোটদান। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

অবাধ: খণ্ডঘোষের কেরিলি এলাকার একটি বুথে খোলা জানালার পাশে চলছে ভোটদান। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের গায়েই জড়ো হয়ে রয়েছেন তৃণমূলের ১৫-২০ জন কর্মী-সমর্থক। বিরোধী সমর্থক ভোটার দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন কয়েকজন। তাঁকে ঘিরে ধরে সোজাসাপটা বলছেন, ‘পঞ্চায়েতে ভোট দাওনি, এখনও দেওয়ার দরকার নেই। গরমে লাইনে দাঁড়ানোরও দরকার নেই।’ কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইন থেকে বেরিয়ে গেলেন কয়েকজন। পাশে ফোনে ব্যস্ত পুলিশ। রবিবার দুপুরের এই ছবি খণ্ডঘোষের বাদুলিয়া গ্রামের একটি বুথের।

এই গ্রামেই বাড়ি জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য তথা খণ্ডঘোষ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলামের। দলেরই কর্মীদের একাংশের দাবি, হুমকির অভিযোগ ওঠায় নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছিলেন তিনি। এ দিন সেহারাবাজারের কাছে একটি চালকলে ভেতরে বসেই তাই কর্মীদের কী করতে হবে, কত ভোট হবে, সে সব প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছিলেন তিনি। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের ওই নেতা কোথাও ৯০ শতাংশ, কোথাও ৯৫ শতাংশ ভোট করানোর ফরমান জারি করেছিলেন। দলের কর্মীরাও তা পালন করতে হুমকি, ভয় দেখানো, মারধর কিছুই বাকি রাখেননি।

বাদুলিয়ার বুথ থেকে কিছুটা দূরে দুবরাজহাট শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বয়স্ক ভোটারদের মা, মাসি সম্বোধন করে বুথে নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়াচ্ছেন কয়েকজন। বিরোধীদের অভিযোগ, এঁরা সকলেই তৃণমূল কর্মী। প্রিসাইডিং অফিসার সুব্রতকুমার ঘোষ প্রথমে মৃদু প্রতিবাদ করলেও পরে চুপ হয়ে যান। ওয়েবক্যামও ছিল ওই বুথে। কিছুক্ষণের মধ্যে বয়স্ক ভোটারদের সঙ্গে ইভিএমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার একাধিক ছবি চলে যায় নির্বাচন কমিশনের দফতরে। সরিয়ে দেওয়া হয় ওই প্রিসাইডিং অফিসারকে। খণ্ডঘোষের বিডিও, সেক্টর অফিসারেরা এসে নতুন প্রিসাইডিং অফিসার মোতায়েন করেন। বেরুগ্রাম, টেরিটি, কাঁটাপুর, হরিশচন্দ্রপুর, শশঙ্গা অঞ্চল-সহ একাধিক বুথও এ ভাবেই দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

শনিবার রাত থেকে বর্ধমানের তেলিপুকুরের কাছে একটি লজে দলবল নিয়ে রয়েছেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, কাটোয়ার ওই দলবলই খণ্ডঘোষ বিধানসভার গলসির সাতটি অঞ্চলে ভোট করিয়েছে। গলসির মসজিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে ইভিএমের পাশে একাধিক লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওই বুথ থেকেও প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার থেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ পড়ে রয়েছেন বর্ধমানে, দলের জেলা কার্যালয়ে। সেখানেই খণ্ডঘোষের আলিপুর গ্রামে নিহত দলের কর্মী কামরুল শেখের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ দিন ওই পরিবার দাবি করেন, বাড়ির কর্তা তৃণমূলের পুরনো কর্মী ছিলেন। তাঁরাও তাঁরই অনুগামী। নিহতের ছোট ছেলে শেখ কুতুবউদ্দিনের দাবি, ‘‘আমাদের তৃণমূলের উপরে কোনও রাগ নেই। স্থানীয় নেতারাই বাবাকে খুন করিয়েছেন। তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি।’’

সেহারাবাজারের কাছে ভোট ‘তদারকি’ করছিলেন খণ্ডঘোষের ব্লক তৃণমূল পর্যবেক্ষক উত্তম সেনগুপ্তও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী অনেক জায়গায় ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।’’ এর মধ্যেই খবর আসে ধরমপুর গ্রামে এক বিজেপি সমর্থককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির পর্যবেক্ষক বিজন মণ্ডলের দাবি, ‘‘অনেক বুথের জানলা খোলা রেখে, কোথাও ইভিএমের পাশে দাঁড়িয়ে ভোট করিয়েছে তৃণমূল। যেখানে মানুষ দলবদ্ধ হয়ে ভোট দিতে চেয়েছেন, সেখানেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে ভোটারদের আটকানো হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারও বলেন, ‘‘৩৮টি বুথে ছাপ্পা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছি।’’

ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি, ‘‘আমরা সারা বছর উন্নয়ন করি। আর ভোটের এক মাস রাজনীতি করি। এই সময় রাস্তার উন্নয়ন বুথে চলে আসে।’’

Election 2019 Phase 6 Lok Sabha Election 2019 Khandaghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy