Advertisement
E-Paper

বিফলে যাবে না এত লড়াই, আশায় ওরা

স্কুলজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় কেটেছে স্কুলে না এসে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছে তারা। তিন বছর আগের   সব পড়ুয়া কি স্কুলে ফিরেছে?

কেদারনাথ ভট্টাচার্য , সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৬
বাধা ঠেলে মাধ্যমিকে।

বাধা ঠেলে মাধ্যমিকে। — ফাইল চিত্র।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কেউ হাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টায় ফিরে এসেছে পড়াশোনার জগতে। কেউ আবার শত বিপাকের মধ্যেও পড়া ছাড়েনি। করোনা-কালে নানা সমস্যা পেরিয়ে এ বার মাধ্যমিকে বসতে চলেছে অনেক পরীক্ষার্থী।

বর্ধমানের গোদা তালপুকুর এলাকার এক ছাত্রীর পরিবারের সদস্যেরা দিনমজুরি করেন। বর্ধমান আদর্শ বিদ্যামন্দির থেকে এ বার মাধ্যমিক দেওয়ার কথা তার। স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, ফর্ম পূরণের দিন পেরোতে চললেও মেয়েটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকেরা তার বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি বাবা-মায়ের সঙ্গে গলসিতে ধান কাটার কাজ করতে গিয়েছে। অনেক কষ্টে স্কুলের তরফে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে স্কুলে এনে মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করানো হয়। ওই ছাত্রী জানায়, গত দু’বছরে সে কোনও ক্লাস করতে পারেনি। বাড়িতে মোবাইল ছিল না। অভাবের কারণে সে-ও চাষের কাজে যায় নিয়মিত। তবে এখন সে মাধ্যমিকের জন্য পড়াশোনা শুরু করেছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাই তাদের জন্য স্কুলটাই সব কিছু। দু’বছর তাদের সঙ্গে স্কুলের যোগ খুব কম ছিল। মোবাইল ছিল না, স্কুল বন্ধ ছিল। তাই তাদের জন্য এ বার মাধ্যমিক খুব সমস্যার।’’

বর্ধমানের রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতনের এক ছাত্রও দশম শ্রেণিতে ফর্ম পূরণ করতে আসেনি। স্কুল খবর পায়, সে ক্যাটারিংয়ের কাজে যোগ দিয়েছে। এর পরেই তাকে ফিরিয়ে এনে ফর্ম পূরণ করানো হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন প্রায় ৫-৬ জনকে খুঁজে এনে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, পরের বছর মাধ্যমিকেও এই প্রবণতা থাকার সম্ভাবনা। করোনার প্রভাব এত দ্রুত মুছবে না।’’

পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্র প্রীতম দাসের বাবা চা বিক্রি করে সংসার চালান। করোনা পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়ে যায়। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে, সংসারের হাল ফেরাতে বাবাকে চা বিক্রিতে সাহায্য করতে হয়েছিল প্রীতমকেও। তার কথায়, ‘‘তখন পড়াশোনা চালানোর থেকেও পরিবার কী ভাবে বাঁচবে, সেটাই ছিল চিন্তার। দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। স্কুল খোলার পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ তার মা স্বপ্না দাস বলেন, ‘‘আর্থিক কষ্টের জন্য ছেলেকে গৃহশিক্ষক দেওয়া যায়নি। তবে ও জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় হারবে না বলেই বিশ্বাস।’’ পূর্বস্থলীর ওই স্কুলেরই ছাত্র বুধু সাউ বড়কোবলার লোহার ব্রিজ এলাকায় ছোট ঘরে ঠাকুমার সঙ্গে থাকে। জন্মের আগেই বাবা ও পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছে সে। ঠাকুমা পরিচারিকার কাজ করে তাকে পড়াশোনা করান। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ঠাকুমার কোনও কাজ ছিল না। তখন বাড়িতে ঠাকুমার সঙ্গেই মুরগি পালন করতে হত বুধুকে। দোকানে ডিম বিক্রি করে কোনও রকমে চলেছে সংসার। তার কথায়, ‘‘তখন পড়ার থেকে বাঁচার লড়াই ছিল বেশি বড়। স্কুল খোলার পরে পড়াশোনায় গতি বাড়াতে হয়েছে। স্যরেরা সাহায্য করেছেন। ফল যাতে ভাল হয়, সে চেষ্টা করছি।’’

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কয়েক জনের পরিবারকে করোনা-কালে নানা সমস্যার পড়তে হয়েছে। তবে স্কুল তাদের পাশে রয়েছে। পরীক্ষার আগে তাদের মনের জোর যাতে না কমে, তা দেখা হচ্ছে।’’ এত লড়াই বিফলে যাবে না, আশায় পরীক্ষার্থী থেকে শিক্ষক-অভিভাবক, সকলেই।

Madhyamik 2023 Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy