গত বছর মাধ্যমিকে পরীক্ষার হলের মধ্যে জেলায় দু’জনের কাছে মোবাইল পেয়েছিলেন পরীক্ষকরা। ওই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা সেই বছর বাতিল করে দিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ বছর পর্ষদ আরও কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। পর্ষদ মনে করছে, ফোন না আনা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের বার বার সচেতন করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কেউ ফোন আনে এবং পরীক্ষা চলাকালীন ধরা পড়ে, তা হলে পর্ষদ দোষের গুরুত্ব বুঝে তিন বছর পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক আধিকারিক (বর্ধমান) অঞ্জন ঘোষ বলেন, “পরীক্ষা হলে মোবাইল পাওয়া গেলে তার শুনানি হয়। গত বছর পর্যন্ত এক বছর পরীক্ষা বাতিল হত। তবে ঘটনার গুরুত্ব দেখে বিচার করা হবে।” পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত মনোনীত জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক অমিত ঘোষ বলেন, “মোবাইল নিয়ে কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকেছে, সেটা প্রমাণিত হলে পরীক্ষার্থীকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। দোষ প্রমাণিত হলে গুরুত্ব বুঝে তিন বছর পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল হতে পারে।” পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা হলে ঢোকার সময়েই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের শিক্ষকেরা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইল আছে কি না পরীক্ষা করে দেখবেন, কোনও ভাবে চোখ এড়িয়ে গেলে মোবাইল ফোন জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন পরীক্ষার্থী।
স্কুল শিক্ষকদের দাবি, অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার সময়েই পরীক্ষার্থীদের হাতে অঙ্গীকার পত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানেও স্পষ্ট করে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা নিষেধ বলে জানানো হয়েছে। শিক্ষকেরা মনে করছেন, অভিভাবকেরাও বিষয়টি নিয়ে ততটা সচেতন নন। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। তাদের সচেতন করা ও নজর দেওয়াটাও অভিভাবকদের কর্তব্য। পরীক্ষার্থীরা শৌচাগারে বা পরীক্ষা কেন্দ্রের অন্য কোথাও ফোন রেখেছে কি না, তা দেখার জন্য এ বার প্রত্যেক কেন্দ্রের শিক্ষকদের বার বার নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য জেলা পরিবহণ ও ট্র্যাফিক পুলিশ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে যানজট রুখতে পুলিশ ও এমভিআই থাকবে। জেলার ১৯টি সংগঠনকেই চিঠি দিয়ে বাস পরিষেবা যাতে স্বাভাবিক থাকে ও বিভিন্ন স্কুলের সামনে বাস দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে পরিবহণ দফতর জানিয়েছে। জেলা পুলিশের তরফে ভারী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারী গাড়ি কোন কোন জায়গায় আটকানো হবে, তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন যানজট রুখতে জেলার বেশ কয়েকটি রাস্তা ও সেতুতে রাতে বিশেষ টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, বর্ধমান-বোলপুর রোড, এসটিকেকে রোড, বর্ধমান-আরামবাগ রোড, তেলিপুকুর, নাদনঘাট সেতু, তালিত রেলগেট, নবাবহাটে বিশেষ টহল দেবে ট্র্যাফিক পুলিশ। প্রতিটি ফেরিঘাটেই ‘জলসাথী’ ও ট্র্যাফিক পুলিশ থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত মনোনীত জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক বলেন, “টোটো-সহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনের ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কোনও পরীক্ষার্থী আটকে গেলে তাদের যেন মানবিক ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়, সেই আবেদন করা হয়েছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)