তালা বন্ধ সাঁকোর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
তখনও আলো ফোটেনি। ঠাকুমার কোলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল একরত্তি ছেলেটি। পুলিশকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে, ‘ও পুলিশ, মাকে গলা টিপে বাবা মারছে, আমি দেখেছি। খুব ভয় পেয়েছি’।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বাবা, প্রদীপ মাজি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন দেখে আর শুয়ে থাকতে পারেনি সাত বছরের ছেলে। ঘরের দরজা খুলে অন্ধকারে ছুটে যায় দাদু-ঠাকুমার ঘরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে সবটা। ছুটে আসেন দাদু কার্তিকবাবু। ছেলেকে জাপটে ধেরে বাঁচিয়ে ফেললেও বৌমা শৈবা ততক্ষণে নিথর। রবিবার ভোরে পুলিশ এসে গলসির সাঁকো গ্রাম থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে নাতিকে আঁকড়ে রেখেছেন ঠাকুমা চিনুদেবী।
নাতিল ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় শৈবাদেবীর বাবা-মা, উচ্চগ্রামের বাসিন্দা জয়দেব ও উমা আঁকুড়ে। ওই বৃদ্ধ দম্পতির আফশোস, “আগেও দু’তিন বার শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের মুখে পড়েছে মেয়ে। মিটমাট হওয়ায় মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছিলাম। খুব ঠকে গেলাম।” উমাদেবী বলেন, “ওর (জয়দেববাবু) একটা কিডনি নেই। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। আমাকে একবার যদি বলত, জামাই অতিরিক্ত পণ আর মিথ্যা সন্দেহ করে নির্যাতন করে তাহলে বাড়ি নিয়ে চলে আসতাম। মুখচোরা মেয়েটি কিছুই বলল না।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সাত বছরের ছেলেটি সবার সামনে ঘটনার কথা জানিয়েছে। জেরায় ধৃতও খুন করার কথা স্বীকার করেছে। আমরা ছেলেটির বক্তব্য রেকর্ড করে রেখেছি।”
এ দিন দুপুরে সাঁকো গ্রামের ভানুকালীতলায় নিহত বধূর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা বন্ধ। চারদিক সুনসান। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, সে খোঁজ নেই পড়শিদের কাছেও। সাঁকোর পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধ কারক বলেন, “দেহ নিয়ে আসার পরে মৃতার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়ি তালাবন্ধ রয়েছে। নাতিকে নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন ওঁরা।’’ পড়শিদের ধারণা, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। জয়দেববাবু গলসি থানায় মৃতার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে অভিযোগ করেছেন। মৃতার মা বলেন, “নাতির জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। ওকে আমাদের কাছেই রাখতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy