Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
JP Nadda

নড্ডাকে নানা ক্ষোভ জানাতে চান মণ্ডলেরা

এলাকায় তেমন কোনও রাজনৈতিক পরিচিতি না থাকলেও ভাগচাষি মথুরা মণ্ডলের পরিবারকে তাঁদের সমর্থক বলে দাবি করেছেন বিজেপির জেলা নেতারা।

মধ্যহ্নভোজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র।

মধ্যহ্নভোজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র।

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৮
Share: Save:

বছরখানেক আগে সরকারি প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে বাড়ি হওয়ার আশ্বাস মেলেনি বলে ক্ষোভ রয়েছে। বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। দাবি, হাতে আসেনি রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের কার্ডও। আজ, শনিবার কাটোয়ার মুস্থুলিতে তাঁদের বাড়িতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা দুপুরে খেতে এলে, সে সব কথা পাড়ার ইচ্ছে রয়েছে মণ্ডল দম্পতির। জানাতে চান, স্নায়ুরোগে ভোগা নাতনির চিকিৎসার খরচের সুরাহা করার আবেদনও।

এলাকায় তেমন কোনও রাজনৈতিক পরিচিতি না থাকলেও ভাগচাষি মথুরা মণ্ডলের পরিবারকে তাঁদের সমর্থক বলে দাবি করেছেন বিজেপির জেলা নেতারা। বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সহ-সভাপতি অনিল দত্ত বলেন, ‘‘দরিদ্র চাষি পরিবারের অভাব-অভিযোগ যাতে নড্ডাজি শুনতে পান, সে কারণেই ওই পরিবারটিকে বাছা হয়েছে।’’

মণ্ডল দম্পতির সম্বল বলতে আধা-পাকা অ্যাসবেস্টসের চাল দেওয়া দু’কামরার ছোট বাড়ি, এক বিঘে জমি, একটা গরু। ফসল আর দুধ বিক্রি করে মাস গেলে যে হাজার দু’য়েক টাকা আসে, তা দিয়েই সংসার চলে।

দিন চারেক আগে স্থানীয় বিজেপি নেতারা এসে তাঁদের নড্ডা-সহ ছ’জনের জন্য মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের প্রস্তাব দেন। না করেননি মথুরাবাবুরা। ওই ভাগচাষির কথায়, ‘‘জেপি নড্ডার ছবি পোস্টারে দেখেছি। তিনি দিল্লি থেকে আমাদের বাড়িতে এসে দুপুরে খাবেন, প্রথমে বিশ্বাস করিনি। বিজেপির তরফ থেকেই বাড়ি রঙ করা ও সাজানোর ব্যবস্থা করেছে। খাবারের খরচ দিতে চেয়েছিল। আমরা নিইনি। সাধ্যমতো আয়োজন করছি।’’

এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, মাটির উঠোনে গেরুয়া রঙের আলপনা দেওয়া হচ্ছে। রান্নাঘরে মাটির দেওয়ালে গোবরছড়া দেওয়া, জানালা-দরজা মোছামুছি চলছে। মথুরাবাবুর স্ত্রী মানবী মণ্ডলের দাবি, তিনি ও তাঁর ছোট মেয়ে পূজা মণ্ডল মিলে বিভিন্ন রকমের নিরামিষ পদ রান্না করবেন। উঠোনে খাটিয়া ও প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে রাখা হবে। ছোট্ট বারান্দায় আসন ও জলচৌকির উপরে মাটির গ্লাসে জল ও কলাপাতায় খাবার দেওয়া হবে। থাকবে ভাত, রুটি, বথুয়া শাকভাজা, আলুভাজা, বেগুনভাজা, আনাজ দিয়ে ডাল, পাঁচমেশালি তরকারি, ফুলকপি-মটরশুঁটির তরকারি, টমেটোর চাটনি, নলেন গুড়ের পায়েস ও রসগোল্লা। শেষে থাকবে মিঠে পান।

বাড়িতে ওই দম্পতি ছাড়াও মথুরাবাবুর বৃদ্ধা মা রয়েছেন। তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। মথুরাবাবুর দাবি, ‘‘আমরা কোনও পার্টি করি না। এক বিঘে জমি চাষ করে মাসে মেরেকেটে হাজার দেড়েক টাকা আয় হয়। তার সঙ্গে গরুর দুধ বিক্রির কিছু টাকা। খুব কষ্ট করে চলি। ধার-দেনা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ের গ্রামেই বিয়ে হয়েছে। জামাইও সাহায্য করে।”

তবে পূজার আট বছরের মেয়ে সোমাকে নিয়ে চিন্তিত তার দাদু-দিদিমা। দু’বছর ধরে স্নায়ুরোগে ভুগছে ওই বালিকা। মাঝেমধ্যেই খিঁচুনি হয়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। কলকাতার চিকিৎসকেরা ভিন্ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিলেও, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। মথুরাবাবু বলেন, ‘‘অত বড় মাপের নেতারা আসবেন জানার পর থেকেই ভাবছি, নাতনির চিকিৎসায় সাহায্য করার কথা বলব। আর বাড়িতে পানীয় জলের যদি ব্যবস্থা করে দেন ওঁরা....।’’

পাকা বাড়ি বা আর কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পাননি? দম্পতির দাবি, রেশনের চাল-ডাল ছাড়া, আর কোনও সরকারি সাহায্য পান না। যদিও স্থানীয় জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গৌতম ঘোষালের দাবি, “চাপের মুখে ওঁরা মিথ্যা বলছেন। আরকেএসওয়াই-১ রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-সহ যাবতীয় সরকারি সাহায্য ওঁদের দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওঁদের বাড়ির সামনেই পঞ্চায়েতের তরফে সরকারি টিউবওয়েল বসানো আছে। ওখানে জলের সমস্যা নেই।’’

চাপের অভিযোগ মানেনি মথুরাবাবু। বিজেপি নেতা অনিলবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের প্রান্তিক মানুষ প্রকৃত পক্ষে কী অবস্থায় আছেন, সে কথা প্রকাশ্যে আসবে ভয়েই, আমাদের দিকে আঙুল তুলছে তৃণমূল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JP Nadda BJP Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE