E-Paper

ফুঁসছে দামোদর, কেন্দ্রকে তোপ মন্ত্রীর

দামোদরে জল বাড়ছে। বৃষ্টি বাড়লে দামোদরের নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৩
ভরা দামোদর, জামালপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভরা দামোদর, জামালপুরে। নিজস্ব চিত্র

টানা তিন দিন ধরে ৭০ হাজার কিউসেকের বেশি জল ছেড়েছে ডিভিসি। রবিবার দামোদরের তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তাতে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন দামোদর-পাড়ের বাসিন্দা ও প্রশাসনের একাংশ। রবিবার বিকেলে মেমারির বেলুই গ্রামে ফুটবল প্রতিযোগিতা চলাকালীন বাজ পড়ে তিন জন দর্শক জখম হন। তাঁরা পাহাড়হাটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। এ দিকে দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে গিয়ে রবিবার রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার অভিযোগ করেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে যখন ইচ্ছা জল ছেড়ে দিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।’’

প্রশাসনের দাবি, দামোদরে জল বাড়ছে। বৃষ্টি বাড়লে দামোদরের নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অগস্টে মাধবডিহির (রায়না ২ ব্লক) বেশ কয়েকটি গ্রাম জলের তলায় চলে গিয়েছিল। রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান পঞ্চায়েতের আদমপুর, কামারগোড়িয়া গ্রাম দ্বীপের মতো জেগে ছিল। মুণ্ডেশ্বরী জল ‘ব্যাক ফ্লো’ করে দেবখাল ধরে গ্রামে ঢুকেছিল।

জেলাশাসক আয়েষা রানি এ থেকে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসরা বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন। এ দিন আদমপুরের বাসিন্দা সঞ্জিত ক্ষেত্রপাল, স্বপ্না ঘোষদের দাবি, “দামোদরের জল বাড়ছে। মুণ্ডেশ্বরীর জল বাড়তে শুরু করেছে। নদীর জল বাড়লে আমাদের চিন্তা বাড়ে।” গত অগস্টে জমি জলের তলায় থাকায় বেশ কিছু জমিতে চাষ হয়নি। কোথাও দু’বার করে চাষ করতে হয়েছে। ফের জল ঢুকলে ফসল মিলবে কি না, সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এলাকার চাষিরা। ব্লক সূত্রে জানানো হয়েছে, পঞ্চায়েতের সদস্যদের নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর নদীর জল বাড়ছে কি না, তা নিয়মিত দেখছে।

অগস্টে জল বাড়ার ফলে খণ্ডঘোষের চরমানা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল। জলও ঢুকেছিল। রবিবার শশঙ্গা পঞ্চায়েতের দামোদর পাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে প্রচার চলে। ব্লক প্রশাসনের দাবি, সেচ দফতর ইতিমধ্যে চরমানাতে ভাঙন রোধের কাজ করবে বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিধায়ক (খণ্ডঘোষ) নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকার মধ্যে গলসি ২ ব্লকের ভুঁড়ি ও গোহগ্রামে প্রচার করা হচ্ছে। গোহগ্রামে দামোদরের জল পাড়ের কাছে চলে এসেছে।”

নিম্ন দামোদর এলাকার মধ্যে পড়ে জামালপুরের একাংশ। দামোদরের জল বাড়লে হুগলি লাগোয়া জ্যোৎশ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দামোদরের পাড় ঘেঁষা শিয়ালি, মাঠশিয়ালি, কোরা, মুইদিপুর এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। জল বাড়লে বা বৃষ্টির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া বাড়িতে না থেকে স্কুল কিংবা সরকারি জায়গায় উঠে আসার জন্য প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ ডিভিসি ৭১,৭২৫ কিউসেক জল ছেড়েছে। জেলাশাসক বলেন, “প্রতিটি ব্লক ও পঞ্চায়েতকে সতর্ক করা হয়েছে। নদীতে নামার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা রয়েছে। বাঁধগুলির দিকেও আমাদের নজর রয়েছে।”

এ দিন দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এ দিন ব্যারাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে যথাক্রমে ৩২৫০০ এবং ৩৭৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। দুর্গাপুর ব্যারাজের জলস্তর স্বাভাবিক রাখতে শনিবার ৭৫৬৫০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছিল। তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় এ দিন সকাল ৭টা থেকে ৭১৭২৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়েছে।

ব্যারাজ পরিদর্শনের পরে নাম না করে কেন্দ্রকে নিশানা করে মন্ত্রী বলেন, ’’রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয় না। অথচ, ডিভিসি গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা।’’
(তথ্য সহায়তা: সুব্রত সীট)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

DVC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy