Advertisement
E-Paper

কেঁচো সারে ফলন বৃদ্ধি, মিলছে দামও

বছর খানেক আগে বিঘেখানেক জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন কৈচর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের দুরমুট গ্রামের নিমাই ঘোষ। রাসায়নিক সার দিয়েও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পারেননি তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৭
কেঁচো সার তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

কেঁচো সার তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

বছর খানেক আগে বিঘেখানেক জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন কৈচর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের দুরমুট গ্রামের নিমাই ঘোষ। রাসায়নিক সার দিয়েও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পারেননি তিনি। দু’মাস চাষের পরে মেরেকেটে ১৫ মণ আলু ঘরে তুলেছিলেন। আবার সেই আলুরও মান এতটাই খারাপ যে মহাজনের কাছ থেকে তেমন দাম পাননি। দেনায় ডুবে ঘটি বাটি বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে। তবে গত ছ’মাসে ছবিটা অনেকটাই বদলেছে। কৃষি দফতরের দাবি, মঙ্গলকোট ব্লক ও কৈচর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে চাষে কেঁচো সারের ব্যবহারে চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন।

মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসনের দাবি, শুধু নিমাইবাবু নন, দুরমুট গ্রামের প্রায় সাড়ে ছ’শো চাষি কেঁচো সার ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। এতে ফলন যেমন বাড়ছে তেমনই ফসলের মানও বজায় থাকছে। ওই গ্রামের নুরুল, সাইফুর, রফিকেরা জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামে ধান, সব্জি ও ফল চাষে জৈব সার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ব্লক কৃষি আধিকারিকদের উদ্যোগে প্রথমে ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তাঁরাই চাষিদের জৈব সারের ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন করেন। প্রাথমিক স্তরে ব্লকের তরফ থেকে প্রত্যেক চাষিকে ৫০০ গ্রাম করে কেঁচো দেওয়া হয়েছিল। তারপর মটিতে ইউরিয়া, ফসফেট, ডিএপির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে কেঁচো প্রতিপালন শুরু করেন চাষিরা। বেগুন চাষি ইবাতুল্লা শেখ বলেন, ‘‘কেঁচো সারে চাষ করে তিন কাঠা জমিতে প্রতি সপ্তাহে ৩০-৪০ কেজি বেগুন তুলতে পেরেছি।’’ বেগুনের মতোই আলু, পেঁয়াজ, কুমড়ো চাষেও আগের থেকে ফলন অনেক গুণ বেড়েছে বলে জানালেন গৌতম ঘোষ, শেখ সামসুররা।

প্রশাসনের দাবি, ফলন বাড়ার সঙ্গে কেঁচো সার তৈরির কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন অনেকে, পুকুর কাটা বা রাস্তা তৈরিতে আগে যেখানে গড়ে ৪৫ দিন কাজ পাওয়া যেত সেখানে এখন গ্রামবাসীরা ৮৫ দিন শ্রমদিবস পাচ্ছেন বলে প্রশাসনের দাবি। সঙ্গে বাঁচছে রাসায়নিক সার কেনার টাকা। আগে যেখানে নিখরচায় বিঘা পিছু ৫-১৬ মণের বেশি আলু বা ধান হতো না এখন সেখানে বিঘায় ৩০ মণ ধান ফলছে। ধান চাষি রফিক শেখের কথায়, ‘‘কেঁচো সারে খরচ অনেক কম। বিঘা পিছু যেখানে ১০০ কেজি ডিএপি লাগত এখন সেখানে ৫০ কেজি কেঁচো সারেই কাজ হয়ে যায়।’’ এই সার প্রয়োগে ধানে মাজরা পোকা বা আলুতে ল্যাদা পোকার আক্রমণও কমেছে। আর এক চাষি নুরুল হুদা শেখের দাবি, ‘‘মাঠে ট্রাক্টর চালালে মাটি ভারী হয়ে যেত, দলা পাকিয়ে যেত। কিন্তু এখন কেঁচো সার দিয়ে মাটি অনেক বেশি নরম থাকছে।’’ জৈব সার ব্যবহারে ধানের স্বাদও বেড়েছে বলে চাষিদের দাবি।

দুরমুটে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষদের সঙ্গে বাড়ির মহিলারাও সংসারের কাজ সামলে কেঁচো সার তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন। কেঁচো সার দিয়ে ৩ বিঘা ভেন্ডি চাষ করে প্রতি সপ্তাহে ৫০ কেজি ভেন্ডি তুলেছেন বলে জানলেন ফরিদা বিবি। কচু, আমের ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সব্জির রং ভাল হয়েছে। তাঁদের দাবি, টাটকা, চকচকে সব্জি দেখে মহাজনদের কাছ থেকে বস্তাপিছু কিছুটা বেশি দামও মিলেছে। মঙ্গলকোটের বিডিও সায়ন দাশগুপ্ত জানান, কেঁচো সারের প্রয়োগে মাটিতে নাইট্রোজেন বেড়ে যায়। ফলে মাটি উর্বর হয়। মঙ্গলকোটের সমস্ত ব্লকেই কেঁচো সার ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘জৈব সারের প্রয়োগ লাভজনক হয়েছে। চাষিরা নিজেই সার তৈরি করতে পারছেন। ফলন বেশি হলে প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। সমবায় পরিদর্শকের সাথে কথা হয়েছে।’’ মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা আনিকুল ইসলাম জানান, সব্জি চাষে জৈব সারের পাশাপাশি জৈব কীটনাশকের ব্যবহার করলে চাষিরা আরও উপকার পাবেন।

fertlizer productivity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy