Advertisement
E-Paper

সাদা চোখে মনে হতে পারে পুলিশের পিস্তল

পুলিশ কর্তাদের দাবি, গত কয়েক মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে যে সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে ৭.৬৫ মিলিমিটার (এমএম) বোরের পিস্তল বেশি মিলেছে। সংখ্যায় তা হারিয়ে দিয়েছে ৯ এমএম ও ৭.২ এমএম পিস্তলকে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০১:৩১
সেই আগ্নেয়াস্ত্র। নিজস্ব চিত্র

সেই আগ্নেয়াস্ত্র। নিজস্ব চিত্র

এগিয়ে রয়েছে ৭.৬৫। যা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের।

পুলিশ কর্তাদের দাবি, গত কয়েক মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে যে সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে ৭.৬৫ মিলিমিটার (এমএম) বোরের পিস্তল বেশি মিলেছে। সংখ্যায় তা হারিয়ে দিয়েছে ৯ এমএম ও ৭.২ এমএম পিস্তলকে। এমনকী, রবিবার রাতে বর্ধমানের গোদার একটি ডাকাত দলকে গ্রেফতার করেও পুলিশ একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল পেয়েছে। বাকি তিনটে ‘ওয়ান শটার’ (পাইপগান)।

দীর্ঘকাল ধরেই সমাজবিরোধীদের একটা বড় অংশ ‘ওয়ান শটার’ ব্যবহার করে। কারণ, তা কম দামে বাজারে মেলে। গুলিও সহজলভ্য। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে ব্যবহার করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী এই আগ্নেয়াস্ত্র। তবে ‘ওয়ান শটার’-এর সমস্যাও রয়েছে, অনেক সময় ব্যারেলের মধ্যেই গুলি ফেটে গিয়ে চোট লাগে। আবার পাকা হাত না হলে গুলি ছোড়ার ঝাঁকুনিতে ‘টার্গেট’ ফস্কানোর ব্যাপার থাকে। তা ছাড়া, এই আগ্নেয়াস্ত্রে গুলি ভরা এবং পরপর গুলি ছোড়া সময় সাপেক্ষ।

এই জায়গা থেকেই নয়ের দশকে বেআইনি অস্ত্র-বাজার ধরতে শুরু করে ৯ এমএম পিস্তল। প্রথমে চিন থেকে চোরা পথে, পরে মুঙ্গেরের হাত ধরে। ওই পিস্তলের সুবিধা হল— তুলনায় হালকা, গুলি চালানোর ঝাঁকুনি বা ‘রিকয়েল’ কম, দূর পাল্লাতেও লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা মন্দ নয়। এক-একটা ম্যাগাজিনে গুলির সংখ্যাও তুলনায় বেশি।

৯ এমএমের পরবর্তী সংস্করণ ৭.২ এমএম। মুঙ্গেরের তৈরি এই পিস্তল ৯ এমএমের তুলনায় হাল্কা। কিন্তু এই পিস্তলের দাম বাড়তে থাকায় এখন বেআইনি বাজার ‘দখল’ করছে মুঙ্গেরেরই তৈরি ৭.৬৫ মিমি পিস্তল। বর্ধমানে উদ্ধার হওয়া ৭.৬৫ মিমি পিস্তলটি পাওয়া গিয়েছে বিহারের এক দুষ্কৃতীর কাছ থেকে।

জেলা পুলিশের এক পিস্তল-বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, ৭.৬৫ এমএম পিস্তলটি দেখতে ৯ এমএমের মতো। তবে এতে .৩২ ক্যালিবার পিস্তলের গুলি ব্যবহার করা হয়। দেশি ৯ এমএম পিস্তল গুলিভর্তি অবস্থায় ওজন প্রায় দেড় কিলো, ৭.২ এমএম ১,১০০ গ্রাম, সেখানে গুলিভর্তি ৭.৬৫-এর ওজন ৯০০ গ্রাম।

জানা গিয়েছে, দেশি ৯ এমএম দুষ্কৃতীরা কেনে ৫০-৭০ হাজার টাকায়। ৭.২ এমএম বিক্রি হয় ৩৫ হাজার টাকায়। সেখানে ৭.৬৫ মিমি পাওয়া যায় ২৫-২৮ হাজার টাকায়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতার তিলজলায় সিএন রায় রোডের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে আটটি ৭.৬৫ মিমি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম-সহ দু’-তিনটি জায়গা থেকে ওই পিস্তল পেয়েছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকেও ওই পিস্তলের গুলি দিয়ে খুন করা হয়।

গোয়েন্দাদের দাবি, ৯ এমএম বা ৭.২ মিমিতে ট্রিগারের ‘গ্রিপ’ ঠিকমতো ধরতে না পারলে গুলি এ দিক-ও দিক হতে পারে। প্রযুক্তিতে এখানেই এগিয়ে রয়েছে ৭.৬৫ মিমি। ওই পিস্তল গ্রিপ করার (ধরার) সমস্যা নেই। গুলি বেরনোর আওয়াজও তুলনামূলক কম।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “৭.৬৫ এমএম দেখতে অনেকটা বেলজিয়ামের তৈরি ৯ এমএম পিস্তলের মতো। সাদা চোখে দেখলে মনে হবে পুলিশেরই পিস্তল!”

পুলিশ সূত্রের দাবি, ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটের সময় ৭.২ মিমি পিস্তলের সঙ্গে দুটি গুলি ভর্তি ম্যাগজিন ‘ফ্রি’তে দিয়েছিল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই সব অস্ত্র ব্যবসায়ীরা একই কায়দায় ৭.৬৫ মিমি পিস্তল বিক্রির জন্যও সমাজবিরোধীদের ‘অফার’ দিতে শুরু করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার আশ্বাস, “অস্ত্র কারবারিদের ধরতে ফাঁদ পাতা শুরু করেছি আমরাও।”

Weapons Guns Range
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy