ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত পড়শি

প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে পড়শি কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হতে স্থানীয় বাসিন্দারাই অভিযুক্ত রথীনদেব নন্দীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বর্ধমান শহর লাগোয়া বাজেপ্রতাপপুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাজেপ্রতাপপুরের কাছে সরাইটিকর পঞ্চায়েতের হরিনারায়ণপুর-বিদ্যাসাগর পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, এক কামরার একতলা বাড়ি রথীনের বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। স্ত্রী ও মেয়ে বাজেপ্রতাপপুরের বাঙালপাড়ায় ভাসুরের বাড়িতে রয়েছেন। ওই বাড়িরই লাগোয়া ছিটেবেড়ার বাড়িতে ওই কিশোরী মা-দিদিমার সঙ্গে থাকে। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা গত ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে স্বামীর সঙ্গে পাশের বাড়ির কিশোরীর কথোপকথন শুনে সন্দেহ হয় অভিযুক্তের স্ত্রীর। তিনিই ওই কিশোরীর বাড়ি গিয়ে মোবাইল কেড়ে নেন। মারধরও করেন বলে অভিযোগ। পরে সন্ধ্যায় বাড়িতে মারধরের কথা জানায় ওই কিশোরী। বিচার চেয়ে স্থানীয় কয়েজনের কাছে যান তাঁরা। সেখানেই ওই কিশোরী অভিযোগ করে, ভয়ে দেখিয়ে দু’তিন মাস ধরে তাকে ধর্ষণ করত পড়শি ঠিকাদার রথীন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, “ওই যুবক নিজেকে তৃণমূল নেতা দাবি করে কিশোরীকে ভয় দেখাত। অভিযোগ করলেও তাঁর কিছুই হবে না, বরং ওই কিশোরী পরিবারকে বদনাম দিয়ে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিত। তাই মেয়েটি মুখ বুজে সহ্য করেছে।” এরপরেইওই যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বছর বত্রিশের ওই যুবককে।

ওই কিশোরীর মা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়িতে না থাকার সুযোগে পড়শি রথীন নন্দি একাধিক বার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘সোমবার সন্ধেয় মেয়ে কান্নাকাটি করছে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সবটা খুলে বলে ও।’’

এ দিন বিকেলে স্থানীয় মহিলারা ওই কিশোরীর উপর নির্যাতন ও অভিযুক্তের শাস্তির দাবি করে মিছিল করেন। অভিযুক্তের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখানো হয়। মিছিলে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মলয় হাজরা। তাঁর কথায়, “রাজনীতিগত ভাবে নয়, এক কিশোরীর উপর অত্যাচার হয়েছে। পাড়ার মহিলারা প্রতিবাদ করছেন। তাতে স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমিও শামিল হয়েছি। বাকিটা পুলিশের ব্যাপার।” বর্ধমান ১ ব্লকের তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ দেবনারায়ণ গুহ বলেন, “দলের নাম ভাঁড়িয়ে কেউ অন্যায় করবে, সেটা আমরা মানব না।

অভিযুক্তের মা যদিও ছেলের কীর্তির কথা মানতে চাননি। তিনি জানান, রথীন বাড়ির মেজ ছেলে। বছর সাতেক ধরে বিদ্যাসাগরপল্লিতে রয়েছে। আট বছর আগে বিয়ে হয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়েও রয়েছে। তাঁর দাবি, “ঘটনার সময় আমি অন্য ছেলের বাড়িতে ছিলাম। কোনও কারণে রথীনকে ফাঁসানো হয়েছে।” ”

পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরী বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। তার মেডিক্যাল পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। যুবককে এ দিন আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশ হেফাজত দেন বিচারক।