Advertisement
E-Paper

মানা থেকে বালি পাচারে ধৃত ৯

দামোদর অবৈধ বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা সফরে এসে বালি পাচার রুখতে কড়া হতে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও হয়নি। এ বার বালি খাদান সংলগ্ল মানার বাসিন্দাদের টানা অনশনে চাপে পড়ে বালি পাচার রুখতে নড়েচড়ে বসল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০০:৩৭

দামোদর অবৈধ বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা সফরে এসে বালি পাচার রুখতে কড়া হতে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও হয়নি। এ বার বালি খাদান সংলগ্ল মানার বাসিন্দাদের টানা অনশনে চাপে পড়ে বালি পাচার রুখতে নড়েচড়ে বসল পুলিশ।

শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে দামোদর নদে অবৈধ বালি তোলার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতার করল বড়জোড়া থানার পুলিশ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার মন্তব্য, “বালি চুরি নিয়ে কোনও অভিযোগ পেলেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে বালি চুরি হচ্ছে খবর পেয়ে দামোদরের বাবনাবেড়া ঘাটে অভিযান চালিয়ে একটি বোট ও পাম্পসেট আটক করে বড়জোড়া পুলিশ। এর পরেই খোঁজ শুরু হয় চক্রের মাথাদের। শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে কাঁকসা, বিধাননগর ও বড়জোড়া থানা এলাকা থেকে ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতার করল বড়জোড়া থানার পুলিশ।

ধৃতদের মধ্যে চন্দ্রনাথ সরকার ও দীলেশ্বর সরকার বড়জোড়ার বড়মানা ও শ্যামল মণ্ডল বড়জোড়ার ছোটমানা এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া সুশীল পাল, জগন্নাথ রুইদাস, তন্ময় সামন্ত, গোপাল লাহা ও সুজিত সিংহ কাঁকসার বাবনবেড়ার বাসিন্দা।

পুলিশের দাবি, সুজিতই এই চক্রের মূল পান্ডা। বছর দুয়েক ধরে এই চক্রটি দামোদর নদের বাবনবেড়া ঘাটে অবৈধ ভাবে বালি তুলছিল। বোটে চড়ে নদী গর্ভ থেকে পাম্পসেটের সাহায্যে বালি তুলে তা বিক্রি করত এই চক্রটি। বাবনবেড়া ঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া বোট ও পাম্পসেটটি এই চক্রেরই বলে দাবি করেছে পুলিশ। যদিও ধৃত সুজিত রবিবার বাঁকুড়া আদালত চত্বরে নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেন। ধৃতদের মধ্যে সুজিত, শ্যামল, তন্ময়, গোপালদের পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের ১২ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ হয়।

অন্যদিকে, শনিবার রাতেই মেজিয়ার পূর্বাতোড় ঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে ট্রাক্টরে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার পথে রবিলোচন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে মেজিয়া থানার পুলিশ। রবিলোচন গঙ্গাজলঘাটির আমডাঙার বাসিন্দা। এ দিন তাকেও আদালতে তোলা হলে ১৩ দিনের জেল হাজত হয়।

দামোদর নদে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে বড়মানা এলাকা ক্রমশ নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অবৈধ বালি তোলা রুখতে বৃহস্পতিবার থেকে মঞ্চ গড়ে অনশনে বসেছেন গ্রামবাসী। রবিবার সকালে অনশনকারীদের মধ্যে সাত জন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সতীশ কবিরাজ নামের এক অনশনকারীকে এ দিন সকালে সাপে ছোবল মারে। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে।

অনশন তুলতে এ দিন বিকেলে বড়মানা এলাকায় যান বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু ওঠেনি। অনশন মঞ্চের আহ্বায়ক ননী রায় বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হলেই বালি পাচার রোখা যায়। এত দিন তা হয়নি। অনশনে বসেছি বলেই পুলিশ ও প্রশাসনের এ বার টনক নড়েছে।’’

গত ডিসেম্বরে মুকুটমণিপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে বালি চুরি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়মানার বাসিন্দাদের অনশনের জেরে নবান্ন থেকে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “দামোদরের দু’পাশে দু’টি আলাদা জেলা। তাই প্রশাসনিক পদক্ষেপ করতে দেরি হয়। তারই সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ কারবারিরা।” ওই কর্তার দাবি, “দামোদরের ঘাটগুলির উপর বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।”

Barjora Sand Mafia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy