Advertisement
০৮ মে ২০২৪
কুষ্ঠ কলোনি

অফিসে যেতে পারেন না, তাই মেলেনি কার্ড

তাঁদের অনেকেই ভাল ভাবে হাঁটতে-চলতে পারেন না। কয়েক জনের হাত-পায়ের আঙুল খসে গিয়েছে। এক সময়ে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওঁরা। এখন সুস্থ। রয়েছেন পুনর্বাসন কেন্দ্র বা কুষ্ঠ কলোনিতে। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র পাননি তাঁদের অনেকেই।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share: Save:

তাঁদের অনেকেই ভাল ভাবে হাঁটতে-চলতে পারেন না। কয়েক জনের হাত-পায়ের আঙুল খসে গিয়েছে। এক সময়ে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওঁরা। এখন সুস্থ। রয়েছেন পুনর্বাসন কেন্দ্র বা কুষ্ঠ কলোনিতে। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র পাননি তাঁদের অনেকেই। না আছে রেশন কার্ড, না হয়েছে আধার কার্ড। ফলে, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁদের। আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীর আশ্বাস, এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ হবে।

আসানসোল পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ‘কাল্লা কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র’। কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসা থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে আসানসোল মাইন্‌স বোর্ড অব হেলথ। বর্তমানে চার জন রোগী সেখানে বাস করছেন। তাঁরা জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপরে চাপ কমাতে তাঁরা সরাসরি সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে চাইছেন। কিন্তু বাধ সেধেছে দেশের নাগরিকত্বের সচিত্র পরিচয়পত্র। তাঁদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড—কোনওটাই নেই। বহু বছর ধরে এখানে বাস করলেও তাঁদের এই সব কার্ড তৈরি করে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ হয়নি। তাঁরা চলতে-ফিরতে বিশেষ পারেন না। ফলে, সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে এ সব তৈরির জন্য তদ্বিরও করতে পারেননি।

ওই কেন্দ্রের আবাসিক মনোজ ধীবর, শঙ্কর রাউথদের অভিযোগ, ‘‘আমরা এক সময়ে পুরসভা থেকে মাসিক সাতশো টাকা ভাতা পেয়েছি। গত দু’বছর সেই টাকা পাচ্ছি না। আমাদের কাছে ভোটার বা আধার কার্ড চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সব নেই। নিজেরা যেতে পারছি না, কেউ বানিয়েও দিচ্ছে না।’’ এখানকার আরও দু’জন মথুর বাউড়ি ও বুধন কোড়া আগে কখনও সরকারি সাহায্য পাননি। তাঁরাও এখন ভাতা চান। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বাধা একই। এলাকার কাউন্সিলর দিলীপ মালি জানান, সচিত্র পরিচয়পত্র না থাকলে সরকারি সুবিধা বা ভাতা পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওঁদের বিষয়টি জানতাম না। তাঁদের কার্ড তৈরিতে উদ্যোগী হব।’’

আসানসোলের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে নিয়ামতপুর মহাত্মা গাঁধী কুষ্ঠ কলোনি। জিটি রোডের পাশে বেশ কিছুটা এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই কলোনি। প্রায় তিরিশটি পরিবার বাস করে। সেখানেও সমস্যা সেই একই। যাঁরা পুরসভা পর্যন্ত হেঁটে যেতে পেরেছেন, তাঁদের রেশন ও ভোটার কার্ড হয়েছে। কিন্তু একেবারে শয্যাশায়ী পুষ্পা কর্মকার, মিনা দত্ত, চারু মাহাতোর মতো কয়েক জনের পরিচয়পত্র তৈরির কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা হয়নি। তাঁরাও বলেন, ‘‘আমাদের কার্ডগুলো করে দিলে সরকারি সুবিধা হয়তো কিছু পেতাম।’’

আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি দফতরের কর্মী পাঠিয়ে দ্রুত ওঁদের কার্ড তৈরি করার যাবতীয় ব্যবস্থা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

leprosy people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE