Advertisement
E-Paper

ডাক্তার ছাড়াই প্রসব নার্সিংহোমে

চিত্র ১: কালনা মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া নিউলাইফ নার্সিংহোম ঢুকে পড়লেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। নার্সিংহোম মালিক নাসির শেখকে প্রশ্ন, ‘আপনার মেডিক্যাল অফিসার কোথায়?’ জবাব এল, ‘‘স্যার উনি ব্যাঙ্কে গিয়েছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৭
নার্সিংহোমের নথি খুঁটিয়ে দেখছেন কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।

নার্সিংহোমের নথি খুঁটিয়ে দেখছেন কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।

চিত্র ১: কালনা মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া নিউলাইফ নার্সিংহোম ঢুকে পড়লেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। নার্সিংহোম মালিক নাসির শেখকে প্রশ্ন, ‘আপনার মেডিক্যাল অফিসার কোথায়?’ জবাব এল, ‘‘স্যার উনি ব্যাঙ্কে গিয়েছে।’’

চিত্র ২: বৈদ্যপুর মোড়ের নিউ অম্বিকা নার্সিংহোম। মালিক দিলীপকুমার দত্তকে মহকুমাশাসকের প্রশ্ন, বর্জ্য ফেলার লাইসেন্স রয়েছে। মালিককে আমতা আমতা করতে দেখে মহকুমাশাসক নিজেই উঠে গেলেন নার্সিংহোমের ছাদে। নজরে এল, ডাঁই করে রাখা সেলাইনের বোতল। হাতে হাতকড়া পড়ল ওই নার্সিংহোম মালিকের।

চিত্র ৩: বৈদ্যপুরের আর এক নার্সিংহোম ইভল্যান্ড। ওটিতে প্রসব চলছে। চিকিৎসক আছেন কি না জানতে চাইতেই নিজেকে নার্স পরিচয় দিয়ে এক মহিলা বললেন, ‘‘সবে এক জনের প্রসব হয়েছে। তবে চিকিৎসক নেই।’’ চোখ কপালে উঠল মহকুমাশাসকের। লাইসেন্স দেখাতে না পারায় গ্রেফতার হলেন নার্সিংহোম মালিক মিহির কোনার।

শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে নার্সিংহোমের নাম জড়াতেই টনক নড়েছিল স্বাস্থ্য কর্তাদের। বর্ধমান শহরের একাধিক নার্সিংহোমে অনিয়ম মেলার পরে নজরে পড়ে কালনায়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কালনার একের পর এক নার্সিংহোমে মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাইকে নিয়ে অভিযান চালান মহকুমাশাসক। মেডিক্যাল অফিসার না থাকা, প্রশিক্ষিত নার্স না থাকা, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারে গ্যাস না থাকার মতো অজস্র অসঙ্গতি ধরা পড়ে। গ্রেফতার করা হয় দুই নার্সিংহোম মালিককে। মহকুমাশাসক জানান, চারটি নার্সিংহোম সিল করে দেওয়া হবে। দুটির অপারেশন থিয়েটার এ দিনই সিল করে দেওয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি থাকা রোগীদের অন্যত্র পাঠানোর কথাও বলা হয় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে। মহকুমাশাসকের আক্ষেপ, ‘‘একটাও নার্সিংহোম পেলাম না যেখানে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন পুরোপুরি মানা হচ্ছে।’’

প্রশাসনের দাবি, এর আগে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কোনও না কোনও ভাবে খবর পেয়ে সাবধান হয়ে যায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এ বার তাই আটঘাঁট বেঁধেই নামেন কর্তারা। কোনও ধোঁয়াশা যাতে তৈরি না হয়, তাই ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনের যাবতীয় নথিও সঙ্গে নিয়ে যান কর্তারা। নিউ লাইফ নার্সিংহোমে ঢুকে দেখা যায়, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারে গ্যাস নেই। অপারেশন থিয়েটারের মান, নার্সদের প্রশিক্ষণ, একটা শয্যা থেকে আর এক শয্যার দূরত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মালিককে ভৎসর্না করে যাবতীয় ত্রুটির রিপোর্ট পাঠানো হয় জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। বৈদ্যপুর মোড়ের দুটি নার্সিংহোমের মধ্যে নিউ অম্বিকা নার্সিংহোমও নথিপত্র দেখাতে পারেনি। উপরন্তু নার্সিংহোমের ত্রিতল ভবনে রোগীর আত্মীয়দের অবৈধ ভাবে থাকার ব্যবস্থা এবং জমানো সেলাইনের বোতল দেখা যায়। এই এলাকার ইভল্যান্ড নার্সিংহোম তো লাইসেন্সই দেখাতে পারেনি। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, এসিএমএইচের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স এসে পৌঁছয়নি। দেখা যায়, চিকিৎসক ছাড়াই প্রসব করানো হচ্ছে। কোনও মেডিক্যাল অফিসারেরও দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে মালিককে গ্রেফতার করে নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরে রেললাইন পেরিয়ে সুরাহা নার্সিংহোমে গিয়ে কর্তারা দেখেন, মেডিক্যাল অফিসার আবদুস সামাদ অন্য নার্সিংহোমে অপারেশনে ব্যস্ত। খবর পেয়ে এসে তিনি বলেন, ‘‘কাছেই বাড়ি। কিছু হলেই দ্রুত চলে আসি।’’

মাস দেড়েক আগে অজস্র ত্রুটি থাকায় নিউ অ্যাপেলো নামে একটি নার্সিংহোম বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। পরে নথি জোগাড় করে তা চালু হয়। এ দিন গিয়ে দেখা যায়, যে কে সেই। মেডিক্যাল অফিসার, নার্স কিছুই নেই। রোগী যন্ত্রণায় কাতরালেও দেখা নেই চিকিৎসকের। নতুন বাসস্ট্যান্ডের কাছে লীলা হাসপাতালের মধ্যে আবার গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করতে দেখা যায় কর্মীদের। কোনও পরিকাঠামোও চোখে পড়ে না। নার্সিংহোমটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন মহকুমাশাসক।

delivery Nursing home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy