ভোট ঘোষণায় উৎকণ্ঠা ছিল, ডাক আসে কি না! চিঠিটা এল— এ বার ভোটের কাজে যেতে হবে আসানসোলে।
এই দায়িত্ব সামলাতে আগেও গিয়েছি। তবে এ বার চিন্তা বেশি। কারণ, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এপ্রিলের যে কোনও দিন সন্তান জন্ম নেবে, জানিয়েছেন ডাক্তার। এর মাঝে ভোটের কাজ! উদ্বেগ মাথায় নিয়েই ভোটের আগের দিন ভোরে গলসি স্টেশনে পৌঁছলাম। ট্রেনে কয়েকটা বড় প্লাস্টিক কিনে নিলাম, কখন কী কাজে লাগে। আসানসোলে ডিসিআরসি-তে পৌঁছে পরিচয় হল আমার দলের বাকি ভোটকর্মীদের সঙ্গে। জিনিসপত্র গুছিয়ে উঠলাম বাসে। গন্তব্য আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের সিএমপিডিআইএল ক্লাবের ভোটকেন্দ্র।
পৌঁছেই বিপত্তি। ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। ততক্ষণে বেলা গড়িয়ে আসছে। সেক্টর অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু তিনি চেষ্টা করেও বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থা করতে পারলেন না। এ দিকে ভোটের সব উপকরণ গুছিয়ে রাখতে হবে এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। অগত্যা সঙ্গে থাকা টর্চ জ্বেলে শুরু হল কাজ। রাত ১০টা নাগাদ বিদ্যুতের ব্যবস্থা হল। আলোয় নজরে পড়ল, চূড়ান্ত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। টেবিল-চেয়ারে ছড়ানো রয়েছে তরকারি, নোংরা কাপড়। সঙ্গী এক ভোটকর্মী কালবিলম্ব না করে সাফাইয়ে লেগে পড়লেন। হাত লাগালাম আমরাও। বুথ সাজানোর কাজটা কোনও রকমে শেষ হল।
এ বার গা-মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম আমরা। শরীর আর দিচ্ছিল না। ট্রেনে কেনা প্লাস্টিকগুলো বিছিয়ে তার উপরে চাদর পেতে তৈরি হল বিছানা। ঘরের অন্য দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিছানা। দেখলাম জওয়ানেরা পালা করে কয়েক জন ঘুমোচ্ছেন। বাকিরা টহল দিচ্ছেন। বিছানার পাশেই ওঁদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো দেখে বেশ রোমাঞ্চ হচ্ছিল। কমবয়সী এক জওয়ান রাতটা কাটিয়ে দিলেন হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা সেরেই। এক জন আবার মশারি গায়ে জড়িয়েই নাক ডাকতে শুরু করেছেন। আমাদের অবশ্য মশার উৎপাতে ঘুম হল না বিশেষ।
ভোরে উঠে পড়লাম। এক কাপ চা পেলে মন্দ হত না। আমার তিন সঙ্গী ছাতুর সরবত তৈরি করলেন। আমাকেও এক গ্লাস দিয়ে বললেন, ‘‘খেয়ে ফেলুন। গরম কম লাগবে।’’ ভোট শুরু হওয়ার খানিক পর থেকেই টের পাচ্ছিলাম, এই অঞ্চলের গরম কেমন! এক ভোটারের মুখে শুনলাম, টেলিভিশনে নাকি দেখেছেন, গরমে এক ভোটকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ভয়টা আরও চেপে বসল। এর মধ্যে সঙ্গে থাকা বোতলের জলও শেষ। নির্বাচনী আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, বুথে জল দেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় কী! শেষে পুরসভার ট্যাঙ্কার থেকে জল নিলাম। কিন্তু সে জল এত গরম যে গলায় ঢালা মুশকিল।
ভোট শেষে জিনিসপত্র জমা দিয়ে ফেরার পালা। কিন্তু ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বিস্তর অব্যবস্থা। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সব জমা দিয়ে বাজার থেকে ঠান্ডা জলের বোতল কিনে ফেললাম একটা। বাড়ি ফিরলাম রাত সাড়ে ১২টায়।
এর দিন কয়েক পরেই জন্ম নিয়েছে আমাদের সন্তান— অরণ্য। তাতেই যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে দুর্ভোগের স্মৃতিটা।
(লেখক আবুঝহাটি টেরাপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy