Advertisement
E-Paper

ভোটে অন্য ছবি করঙ্গপাড়ায়

পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখন নেই। নেই স্লোগান-মিছিল বা রাজনৈতিক সভা-সমিতি। ভোটের এই ভরা মরসুমে রাজনীতি নিয়ে তেমন তাপ-উত্তাপ আপাত ভাবে চোখে পড়ে না দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়া এলাকায়। বিধানসভা ভোট ঘিরে দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে যে একেবারে আলাপ-আলোচনা বন্ধ, তা নয়।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৪
ভোটের মরসুমেও নেই দেওয়াল লিখন। দেখা নেই হোর্ডিং, ব্যানারেরও। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

ভোটের মরসুমেও নেই দেওয়াল লিখন। দেখা নেই হোর্ডিং, ব্যানারেরও। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখন নেই। নেই স্লোগান-মিছিল বা রাজনৈতিক সভা-সমিতি। ভোটের এই ভরা মরসুমে রাজনীতি নিয়ে তেমন তাপ-উত্তাপ আপাত ভাবে চোখে পড়ে না দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়া এলাকায়। বিধানসভা ভোট ঘিরে দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে যে একেবারে আলাপ-আলোচনা বন্ধ, তা নয়। কিন্তু কোনও রকম উত্তেজনার প্রকাশ নেই। সারা শহর যখন রাজনৈতিক দলগুলির ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং, দেওয়াল লিখনে ভরে গিয়েছে, সকাল-বিকেল চলছে মিটিং-মিছিল, করঙ্গপাড়া যেন সে সবের মাঝে এক চিলতে মরূদ্যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কত দিন আগে থেকে এই রীতি চলে আসছে, তা এখন আর ঠিক মতো মনে করতে পারেন না তাঁরাও। তবে প্রবীণ বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, রাজনীতি নিয়ে পাড়ায় যাতে কোনও অশান্তি না বাধে, সেই উদ্দেশ্যে সব দলের জন্যই কয়েক দশক আগে এই অলিখিত নিয়ম চালু করেন এলাকার বিশিষ্ট কিছু লোকজন। তাঁরা চেয়েছিলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য যাতে গ্রামের মানুষের মধ্যে কোনও বিভেদ তৈরি করতে না পারে। তবে কোনও বাসিন্দার রাজনীতিতে যুক্ত হতে বা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন-সহানুভূতি জানাতে কোনও বাধা নেই।

ভোটের মরসুমে দেওয়াল লিখন ঘিরে নানা এলাকায় বিভিন্ন দলের মধ্যে যখন গোলমালের খবর মিলছে, সেখানে করঙ্গপাড়ার বাড়িগুলিতে দেওয়াল পরিষ্কার। দেখে বোঝার উপায় নেই, সামনেই ভোট। বাসিন্দারা জানান, প্রার্থীরা শুধু ভোটের প্রচারে আসেন। সঙ্গে থাকেন জনা কয়েক অনুগামী। কোনও মিছিল নয়, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রচার সারেন প্রার্থীরা। গ্রামের কেউ যদি কোনও ভোটে প্রার্থী হন, সেক্ষেত্রেও একই নিয়ম। জিতলে এই এলাকায় বিজয় মিছিলও করেন না তিনি।

দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। নিজের পাড়ায় বরাবর তাঁকেও ভোটের প্রচার সারতে হয়েছে গ্রামের নিয়ম মেনে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। কাজেই মানুষের আবেগকে সম্মান করি। এখানে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার সারাই কার্যকর উপায়।’’ ওয়ার্ডের অন্যত্র বিজয় মিছিল করলেও গ্রামে কখনও করেননি বলে জানান তিনি। বাসিন্দারা জানান, সবার জন্য নিয়ম এক।

সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনালের সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার জানান, বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়েও দলের কর্মী-সমর্থকেরা ওই এলাকার এমন রেওয়াজ মেনে চলতেন। বিরোধী দলে থাকার সময়ও সেই নির্দেশই বহাল আছে। তিনি বলেন, ‘‘বছরের পর বছর এই রীতি চলে আসছে ওখানে। স্থানীয় মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা তা মেনে চলি।’’

প্রায় ছ’দশক আগে করঙ্গপাড়ায় গড়ে উঠেছিল ‘গ্রামোন্নয়ন সমিতি’। গ্রামের পানীয় জল, নিকাশি-সহ নানা নাগরিক পরিষেবা দেখভাল করত সেটি। পরে এই এলাকা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়। বিশেষ ভূমিকা না থাকলেও সেই সমিতি এখনও রয়ে গিয়েছে। সমিতির বর্তমান সভাপতি জং বাহাদুর সাঁই বলেন, ‘‘রাজনীতি নিয়ে চার দিকে বিবাদ, হানাহানি চলছে। সেখানে এমন এক জায়গার বাসিন্দা হিসেবে আমরা গর্বিত। গ্রামের নতুন প্রজন্মও এই ধারার পক্ষপাতী।’’

banner walling durgapur election assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy