Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেলেনি ঘর, ক্লাবেই বাস বৃদ্ধ দম্পতির

সত্তরোর্ধ্ব ওই দম্পতি জানান, গ্রামে তাঁদের দুই ছেলে দু’টি আলাদা বাড়িতে থাকেন। সেখানে তাঁদের দু’জনের জায়গা হয়নি।

প্রায় এক দশক ধরে এই ঘরেই রয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

প্রায় এক দশক ধরে এই ঘরেই রয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪৬
Share: Save:

পরিজনদের বাড়িতে ঠাঁই হয়নি। সে কারণে প্রায় এক দশক ধরে ক্লাবই ঠিকানা এক বৃদ্ধ দম্পতির। ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় এক কামরায় দিন কাটছে আউশগ্রাম ২ ব্লকের মল্লিকপুরের অরুণ বাউরি ও ক্ষুদিবালা বাউরির। কেন তাঁরা আবাস প্রকল্পে ঘর পাননি, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

সত্তরোর্ধ্ব ওই দম্পতি জানান, গ্রামে তাঁদের দুই ছেলে দু’টি আলাদা বাড়িতে থাকেন। সেখানে তাঁদের দু’জনের জায়গা হয়নি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় ক্লাবঘরটিতে তাঁদের থাকতে দিয়েছিলেন সদস্যেরা। সেখানেই কেটেছে বছর দশেক। মল্লিকপুর মিলনী সঙ্ঘ নামে ওই ক্লাবের তৎকালীন সম্পাদক সৌমিত্র ঘোষ জানান, ‘‘ওই দু’জনের আশ্রয়ের জন্য ক্লাব ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে তাঁরা সেখানেই বাস করছেন।’’

দম্পতি জানান, সেখানে থাকতে তাঁদের অসুবিধা হয়। ঘরে আলো-পাখা নেই। শীতে মেঝেতে থাকা কষ্টকর। ফাঁকা জায়গায় উনুনে রান্না করতে হয়। শৌচকর্মের জন্য যেতে হয় মাঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ক্ষুদিবালাদেবী কোনওমতে রান্না করেন। মাঝেমাঝে পড়শিরা তাঁদের খাবার দেন। দম্পতির ছোট ছেলে ষষ্ঠী বাউরির দাবি, বাবা-মাকে বাড়ি যেতে বললেও তাঁরা যেতে চান না। ক্ষুদিবালা দাবি করেন, ‘‘ছেলেদের নিজেদেরই ঠিকমতো থাকার জায়গা হয় না বাড়িতে। আমরা গেলে সমস্যা বাড়বে। পার্টির লোকজন সবই জানে। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা করছে না।’’

পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, অরুণবাবু বার্ধক্য ভাতা পান। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই সামান্য টাকায় কি দু’জনের দিন চলে? তা ছাড়া, সময়ে ভাতা পাওয়াও যায় না।’’ সরকারি কোনও প্রকল্প থেকে তাঁদের একটি বাড়ি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন সৌমিত্রবাবুও।

এলাকার বিজেপি নেতা দেবব্রত মণ্ডলের অভিযোগ, “বৃদ্ধ দম্পতি ক্লাবে বছরের পরে বছর দিন কাটাচ্ছেন। অথচ, পঞ্চায়েত থেকে তাঁদের ঘরের কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। উন্নয়নের হাল কেমন, এর থেকেই পরিষ্কার।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্ণ পাল দাবি করেন, ‘‘ওই বৃদ্ধের নাম সরকারি আবাসন প্রকল্পের তালিকায় না থাকায় তিনি বাড়ি পাননি। কোনও প্রকল্প থেকে বাড়ির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় আবেদন করেছিলাম।’’

আউশগ্রাম ২ বিডিও গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না। সম্প্রতি জানার পরেই গিয়ে তাঁদের দেখে এসেছি। খাবার, ওষুধ, শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি কোনও প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, দেখা হচ্ছে।” বাবা-মাকে কেন দেখেন না, তা জানার জন্য দম্পতির দুই ছেলেকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Couple Club Ausgram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE