কুকুর নিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। বুধবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
অন্য দিনের মতোই সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে বেরিয়েছিলেন প্রৌঢ়। সময়ে বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়েন বাড়ির লোকজন। রাতে বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে রক্তাক্ত দেহ মিলল তাঁর। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে হিরাপুরের নতুনডিহি গ্রামে পরমানন্দ মাহাতো নামে (৫৪) ওই ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। নিহতের ছেলে অজয় মাহাতো তিন জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরমানন্দবাবু চাষ-আবাদ করতেন। প্রতি সন্ধ্যায় ঘণ্টা দু’য়েক আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরতেন। মঙ্গলবার রাতে না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান পরিজনেরা। রাত ১০টা নাগাদ তাঁরা খবর পান, বাড়ি থেকে খানিক দূরে রেললাইনের পাশে পড়ে রয়েছে তাঁর দেহ। আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতের দেহে তিনটি গুলির চিহ্ন মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোল ও দু’টি তাজা গুলি উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে তারা জেনেছে, ওই গ্রামে ৩৪ জন কৃষক তাঁদের ফসলের জন্য একটি আড়ত তৈরি করেছিলেন। সেটির সহ-সভাপতি ছিলেন পরমানন্দবাবু। আড়তের সভাপতি শিবধারী মাহাতো পুলিশকে জানিয়েছেন, আড়তের তহবিলে প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা জমা ছিল। টাকা জমা-খরচের হিসাব রাখার দায়িত্ব ছিল দুই সদস্যের। অভিযোগ, বছরখানেক ধরে কোনও হিসাব দিচ্ছিলেন না তাঁরা। সে নিয়ে অন্য সদস্যদের বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন পরমানন্দবাবু।
আড়ত সূত্রে জানা গিয়েছে, পরমানন্দবাবু ওই দুই সদস্যের বিরুদ্ধে নালিশ করায় গত বছর অক্টোবরে হিরাপুর থানার পুলিশ তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হিসাব পেশ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পরেও তাঁরা তা না করায় পুলিশের পরামর্শ মতো পরমানন্দবাবু আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে আড়ত ও পরিবার সূত্রের দাবি। এই বিষয়টির সঙ্গে খুনের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতের ছেলে থানায় যে তিন জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁদের মধ্যে আড়তের ওই দুই সদস্য রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
খুনের ঘটনার পরে নতুনডিহি গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বুধবার সকালে গ্রামের বাসিন্দারা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। সকাল ১১টা নাগাদ কুকুর নিয়ে পুলিশের বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়। ঘটনাস্থলের দু’দিকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর ধর্মদাস মাজি বলেন, ‘‘আগে কখনও এই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাই বাসিন্দারা আতঙ্কিত। দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছি পুলিশের কাছে।’’ নিহতের ছেলে অজয় বলেন, ‘‘যারা এই কাণ্ড করল তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’’
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy