Advertisement
০১ মে ২০২৪
Bardhaman Water Tank Collapsed

ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎ দেখলাম ট্যাঙ্ক ফেটে পড়ল নীচে, প্রাণে বাঁচলাম কী করে জানি না!

হাওড়া যাওয়ার ট্রেন ধরবেন বলে প্রতি দিনের মতোই স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখতে পেলাম, বহু পুরনো জলের ট্যাঙ্কটি ফেটে পড়ল নীচে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের উপর।

Screen Grab

জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার পরের মুহূর্তের ছবি। — নিজস্ব চিত্র।

বিক্রম মণ্ডল
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৮
Share: Save:

শক্তিগড়ের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম সকাল সকাল। হাওড়া লোকাল ধরে কলকাতা পৌঁছে কাজকর্ম সেরে আবার সন্ধ্যার ট্রেনে বাড়ি ফিরতাম। কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা পড়েছে বেশ। ট্রেনের হাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে মোটা জ্যাকেট ছিল পরনে। মাফলার দিয়ে মাথা, কান ঢাকা। কিন্তু যে দৃশ্য দেখলাম, শরীরে গরম জামা রাখতে পারছিলাম না। দরদর করে ঘামছি। প্রাণ যে বেঁচেছে সেটাই অনেক!

তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম তখন আস্তে আস্তে ভরছে। আচমকাই প্রচুর জলের শব্দ পেলাম। মাথা তুলে পুরনো ট্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে অবাক! দেখি, পুরনো ট্যাঙ্কটির একটা দিকের দেওয়াল ভেঙে হুড়মুড় করে জল বেরিয়ে আসছে। ঠিক নীচে যাত্রীদের অপেক্ষা করার শেড। জলের তোড়ে ট্যাঙ্কের আরও খানিকটা দেওয়াল ভেঙে পড়ে গেল। পুরো অংশটিই হুড়মুড় করে ভেঙে নীচে এসে পড়ল শেডের উপর। টিনের শেড, লোহার কাঠামোর উপর লাগানো। নীচে গিজগিজ করছে যাত্রীদের ভিড়। সবাই কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে বা বসে। কখন তাঁদের ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট হয়। এরই মধ্যে ঝড়ের বেগে টিনের শেডের উপর পড়তে থাকে জল। সেই সঙ্গে জলের ট্যাঙ্কের লোহার অংশ। সেই ভার আর নিতে পারল না শেড। চোখের সামনে দেখলাম, হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে গেল। বহু মানুষ তখনও নীচে! চিৎকারে কান পাতা দায়। সবাই চাইছে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে। হুড়োহুড়িতে অনেকে পড়ে গেল। বয়স্ক লোকজন প্রচুর। আমিও দৌড়লাম শেডের দিকে। যদি কাউকে বাঁচাতে পারি।

সেখানে পৌঁছে দেখি উল্টো দিকের আরপিএফের ব্যারাক থেকে জওয়ানরা ছুটে চলে এসেছেন। তখনও শেডের তলায় আটকে পাঁচ-ছ’জন। ওই দিকে যে আরও কত জন আটকে কে জানে। চারদিকে সে কী হুড়োহুড়ি, চিৎকার, কান্না! এর মধ্যে পুলিশও চলে এসেছে। আমার পাশে দু’জন কয়েক জনকে পালা করে কাঁধে তুলে নিয়ে গেলেন। ওদের বলতে শুনলাম, এক জনের নাকি মৃত্যু হয়েছে। আমিও কয়েক জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করলাম। সবাই চুপচুপে ভেজা। আঘাত হয়তো বেশি নয়, কিন্তু মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখার বিহ্বলতা চোখেমুখে।

আমি বহু দিন বর্ধমান স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করছি। আগের বার বারান্দা ভেঙে পড়েছিল। তখন অবশ্য আমি সেখানে ছিলাম না। কিন্তু এ বার তো চোখের সামনে! দুই এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝের ওই ট্যাঙ্কটিকে দেখি রোজই। ইংরেজ আমলের জলের ট্যাঙ্ক থেকে মাঝেমাঝেই জল লিক করতে দেখেছি। আমরাও রেলকে অভিযোগ করেছি। কিন্তু ঠিক মতো মেরামতি হতে কোনও দিন দেখিনি। অথচ রং করানো হত নিয়মিত। এখনও ভাঙা ট্যাঙ্কটিকে দেখলেই বোঝা যাবে নতুন রঙের প্রলেপ।

(লেখক বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Station Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE