নাম সুখসাগর হলেও এই প্রজাতির পেঁয়াজ ফলিয়ে গত দু’বছর ছিটোফোঁটা সুখও মেলেনি। এ বছর ছবি বদলেছে। সুখসাগর ফলিয়ে এ বছর বিঘাপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে বলে দাবি পেঁয়াজ চাষিদের। সম্প্রতি জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা শুরু করেছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, ভাল ফলন যেমন মিলছে, তেমনই লাভজনক দরও পাওয়া যাচ্ছে।
কালনা মহকুমায় ছ’হাজার হেক্টর জমি-সহ জেলায় শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ হয় প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে। দীর্ঘদিন ধরে জেলায় সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই পেঁয়াজ দেখতে যেমন ভাল, তেমনই আকার এবং ফলনও ভাল হয়। বিঘা প্রতি জমিতে ফলন মেলে ৮০-১০০ মন। বেশির ভাগ চাষি জমি থেকে ওঠার পরে পেঁয়াজ ফড়েদের কাছে বিক্রি করে দেন। চাষিদের দাবি, গত দু’বছর পেঁয়াজ চাষে লাভের মুখ দেখা যায়নি। মাঠে এক মন পেঁয়াজের দাম খুব বেশি হলে উঠেছিল ২০০ টাকা।
এ বার চাষের শুরুতে পেঁয়াজের চারার দাম ছিল বেশ চড়া। অনেককেই বিঘা ১২-১৫ হাজার টাকা দামে চারা কিনতে হয়েছে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য। ফলে খরচও বেড়েছিল চাষে। বিঘা প্রতি চাষের জন্য খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। তাঁদের দাবি, এ বার আবহাওয়া ভাল থাকায় রোগ, পোকার হামলা তেমন একটা ছিল না। ফলে পেঁয়াজের বৃদ্ধিও ভাল হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে প্রতি মন পেঁয়াজের দর ছিল ৯০০-৯৫০ টাকা। তবে বেশি মাত্রায় জমি থেকে ওঠার পরে দাম কিছুটা কমেছে।
কালনা ২ ব্লকের পিন্ডিরার চাষি সুদীপ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বর্তমানে পেঁয়াজের দর মন প্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এই দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে বিঘা প্রতি হাসতে হাসতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। পেঁয়াজ তোলার পরে মাঠে রেখে দিতে হচ্ছে। বিহার-সহ ভিন্ রাজ্যের ফড়েরা নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছেন পেঁয়াজ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত দু’বছর জেলার পেঁয়াজ চাষিদের ভাল যায়নি। এ রকম লাভজনক দর পেলে চাষিদের মধ্যে পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ বাড়বে।’’
কালনার নান্দাই এলাকার পেঁয়াজ চাষি বাপি শেখের কথায়, ‘‘এ বার ভাল ফলন মিলছে। পেঁয়াজের আকারও বেশ ভাল। ফড়েরা মাঠে নেমে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাল ফলন এবং ভাল দর এক সঙ্গে অনেক দিন পর মিলেছে।’’ চাষিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নাসিকের পেঁয়াজের জোগান কম। ফলে পেঁয়াজের ভাল দর মিলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)