Advertisement
E-Paper

বালির অবৈধ কারবার

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে বেআইনি সব ধরনের খাদান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বেআইনি খাদানের জেরে ‘ব্রিজের ক্ষতি হচ্ছে’, এমন মন্তব্যও করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮
বিরোধীদের অভিযোগ, এ ভাবেই দামোদর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। সিলামপুর লাগোয়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

বিরোধীদের অভিযোগ, এ ভাবেই দামোদর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। সিলামপুর লাগোয়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

দামোদর ও অজয়। এই দুই নদের উপরে দক্ষিণবঙ্গের কৃষি ও শিল্প-অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভরশীল। তবে তার পাশাপাশি এই দুই নদকে কেন্দ্র করে জেলায় বালির অবৈধ কারবারও চলছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে বেআইনি সব ধরনের খাদান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বেআইনি খাদানের জেরে ‘ব্রিজের ক্ষতি হচ্ছে’, এমন মন্তব্যও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কাঁকসা থেকে জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর থেকে বারাবনি, লাগাম পড়েনি বালির অবৈধ কারবারে, অভিযোগ বিরোধীদের। আরও অভিযোগ, কাঁকসায় চারটি বৈধ ঘাটের পাশাপাশি আরও অন্তত পাঁচ-ছ’টি অবৈধ ঘাটও চলছে। অভিযোগের সপক্ষে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি অতীতের কিছু ঘটনার কথাও বলছে। যেমন—

২০১৬-র অক্টোবর। বালিবোঝাই ট্রাক্টর আটক করায় তৎকালীন বিডিও (কাঁকসা) অরবিন্দ বিশ্বাসের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কয়েক জনের বিরুদ্ধে।

২০১৭-র ডিসেম্বর। সাতকাহানিয়ায় অভিযান‌ে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন তৎকালীন ভূমি ও ভূমি সংস্কার (কাঁকসা) আধিকারিক সিদ্ধার্থ মজুমদার।

২০১৮-র অগস্ট। বালির অবৈধ কারবারিরা ইলামবাজার সেতুর স্তম্ভের খুব কাছ থেকে বালি তোলায় সেতুর বিপদ হতে পারে, এই মর্মে এলাকাবাসী অভিযোগ জানান। তিন জন ট্রাক চালককে গ্রেফতার ও তিনটি বালিবোঝাই ট্রাক বাজেয়াপ্ত করেন কাঁকসা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় ও পুলিশকর্মীরা। সেপ্টেম্বরেও বালিবোঝাই তিনটি ট্রাক্টর ধরা পড়ে।

কিন্তু বালির অবৈধ কারবারে যে লাগাম পড়েনি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই তার প্রমাণ, মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অলোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘খাদান বন্ধ হলে তো শাসক দলের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পাণ্ডবেশ্বরে শাসক দলের এক নেতা এই কারবারে যুক্ত, সে খবরও পেয়েছি।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দলের কেউ বালির অবৈধ কারবারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত নন।’’

বিরোধী দলের এক নেতা জানান, সিলামপুর লাগোয়া দামোদরের ঘাট, কাঁকসা ব্লকের বনকাটি, এগারো মাইল, শিবপুর প্রভৃতি এলাকায় অজয় থেকে, এমনকি কুনুর নদ থেকেও বালি পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সিলামপুর লাগোয়া সোনামুখী ব্লকের ওই ঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি পাচার করে তা পানাগড় হয়ে পাচার করা হয়।

বিরোধী দলের নেতারা জানান, বীরভূমের বৈধ বালিঘাটের ‘চালান’ জাল করে অথবা প্লাস্টিকে বালি ঢেকে তার উপরে মাটি চাপিয়েও পাচার চলে। ২০১৭-য় জাল চালান নিয়ে পাচারের অভিযোগে একটি ডাম্পারও আটক করেছিল কাঁকসা থানার পুলিশ। বৈধ বালি ঘাটের এক ব্যবসায়ী জানান, বৈধ ঘাট থেকে তোলা একশো কিউবিক ফিট বালির দর ২২০০ টাকা। তা অবৈধ হলে দাম, এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ফলে অবৈধ বালির ‘বাজার’ও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি রাজস্বের পাশাপাশি বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

যদিও বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) খুরশিদ আলি কাদরির বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। নির্দিষ্ট করা ঘাট ই-টেন্ডার করে বিলি করা হচ্ছে। ঘাটে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। সরকারি যে সমস্ত দফতর ও প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজে বালির দরকার হয়, তাদেরও মাঝ-পথে বালি পরীক্ষা করে বৈধ না অবৈধ তা দেখার জন্য বলা হয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই বারাবনির আটটি ও জামুড়িয়ার ছ’টি ঘাটের জন্য ‘ই-টেন্ডার’ ডেকেছে প্রশাসন। প্রতি ঘাটের জন্য ৫০ একর করে বরাদ্দ করা হয়েছে।

River Bed Illegal Sand Business
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy