সিপিএমের মিছিলে
প্রচারের শেষ দিন যত এগিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে শহরের বাইরের লোকজনেদের— শাসকদলের মিছিল, সভাকে কটাক্ষ করে এমনই দাবি তুলছেন বিরোধীরা। তবে অভিযোগ একতরফা নয়। বহিরাগত ছাড়া বিরোধীদের মিছিলও ভরছে না বলে দাবি শাসকদলের নেতা-কর্মীদের।
কালনার ১৮টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫৮ হাজার লোকের বাস। অথচ তৃণমূল তো বটেই, সিপিএম, বিজেপিও আশপাশের গ্রামের লোকজনদের এনে মিছিল ভরাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। আজ, বুধবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের কালনায় একটি প্রচার মিছিলে যোগ দেওয়ার কথা। তৃণমূলের একাংশ জানান, ওই মিছিলেও যোগ দেবেন গ্রামের কর্মী-সমর্থকেরা। শহরের বাসিন্দারাও বলছেন, এর আগের পুরভোটগুলিতে এত বেশি বাইরের লোকের ভিড় দেখা যায়নি।
সপ্তাহখানেক আগে শহরে শাসকদলের মিছিল হয়। সেখানে প্রার্থীদের জন্য ভোট চেয়ে রাস্তায় হাঁটেন শহরের বাইরের বহু মানুষ। মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে যে সভাটি হয়, সেখানেও জড়ো হওয়া হাজার তিনেক লোকের মধ্যে বেশির ভাগই কালনা ১, কালনা ২ এবং মন্তেশ্বর ব্লকের বলে বিরোধীদের দাবি। মাঠে সামনের সারিতেই দেখা গিয়েছিল এদের। মিছিল, সভার পাশাপাশি ওয়ার্ডে ঘুরে প্রচারেও গ্রামের নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে বলে বিরোধীদের দাবি। অথচ এ শহরেই শাসকদলের ১২ জন কাউন্সিলর রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৫ জনই কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের ফলাফলের হিসেবেও ১৪টি ওয়ার্ডে এগিয়ে শাসকদল। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন সভা ভরাতে বাইরের লোক আনতে হচ্ছে?
বিরোধীদের দাবি, এর প্রধান কারণ শহরে শাসকদলের অজস্র গোষ্ঠী। সারা বছর গোষ্ঠীগুলি নিজেদের মতো দলীয় কর্মসূচি পালন করে। পুরভোটের আগে দলের উপরমহলের নির্দেশে সবাই এক ছাতার তলায় এলেও সেটা যে চাপিয়ে দেওয়া, তা স্পষ্ট এই মিছিলগুলি থেকে। তাছাড়া দলের নিচুতলার কর্মীদের মতে, শহরে এমন নেতার অভাব রয়েছে যাঁর একটা বড় অংশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে ভোটারদের উপর ছাপ ফেলতে বাইরের পঞ্চায়েতের লোকই ভরসা নেতাদের। এমনকী জেলার এক শীর্ষ তৃণমূল নেতা শহরের জনসভায় নেতাদের বাইরে থেকে লোক আনতে অনীহাই বেশ ক্ষুব্ধ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মেমারির একটি জনসভা থেকে ফিরে ওই নেতা শহরের বেশ কিছু নেতার উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন। তাঁর কথায়, ‘‘জনসভায় এমন কিছু নেতা এবং প্রার্থীকে দেখেছি যাঁরা একা সভাস্থলে ঢুকেছে, সঙ্গে লোকজন ছিল না। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দোলা সেনের মিছিলে প্রত্যেক বুথ থেকে লোক আনাতে হবে।’’ যদিও সামনাসামনি বিরোধীদের এ সব অভিযোগ হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। কালনা পুরভোটের দলীয় পর্যবেক্ষক দেবু টুডু কথায়, ‘‘শহরের গা ঘেঁষে বহু গ্রাম রয়েছে। দলকে ভালবেসে মিছিলে, জনসভায় তাঁরা আসতেই পারেন। শহরে আমাদের যা শক্তি তাতে ১৮ টি ওয়ার্ডেই জয় ছাড়া কিছু ভাবছি না।’’
তৃণমূলের সভায় প্রায়ই দেখা যায় এ রকম মুখ। এ নিয়েই উঠছে বিতর্ক।
শুধু শাসকদলই নয়, সম্প্রতি বিজেপিও কালনায় একটি লম্বা মিছিল করে। সেই মিছিলেও কালনা ১, মন্তেশ্বর, দাঁইহাট-সহ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক আনা হয়েছিল বলে নানা দলের দাবি। শাসকদলের কর্মীদের দাবি, সিপিএমও সম্প্রতি শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জাপট এলাকা থেকে শুরু হওয়া মিছিলে বহু পঞ্চায়েত এলাকার লোকজনকে এনেছিল। ওই মিছিলে ছিলেন সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়া সিপিএম নেত্রী অঞ্জু করও। তবে দলের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এর আগে শহরের লোকজনেদের নিয়ে আমরা একটি মিছিল করেছিলাম। এ বার গ্রামের লোকজন থাকলেও শহরের মানুষও কাতারে কাতারে যোগ দিয়েছিলেন।’’ কিন্তু বাইরের লোক আনতে হচ্ছে কেন? স্বপনবাবুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষকে আশ্বস্ত করাই মিছিলের লক্ষ্য।’’
মিছিলে বাইরের লোক আনার হিড়িক দেখে ভোটের দিনে বহিরাগতদের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দারা। বিজেপির বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সভাপতি রাজীব ভৌমিকের দাবি, এই বহিরাগতরাই তৃণমূলের সন্ত্রাসের পুঁজি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘চারটি পুর এলাকার আশপাশের গ্রামের মানুষদের সুপরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করার ছক করছে শাসকদল। আমরা প্রশাসনকে এ কথা জানাচ্ছি।’’ সিপিএম নেতা স্বপনবাবুরও দাবি, ‘‘কালনা পুর এলাকার কয়েকটি জায়গায় শাসকদলের লোকজনেদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসনের নজর কাড়তে চাইছি সে দিকে।’’
তবে বিরোদীদের অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের বর্ধমান জেলার (গ্রামীণ) সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রার্থীরাই তো মানুষকে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। বিরোধীদের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy