দিনের অনেকটা সময়েই থাকে এই ছবি তপসিতে। —নিজস্ব চিত্র।
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রেলগেট আটকে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় নিত্য দিন। উত্তরবঙ্গ-সহ নানা ভিন্ জেলায় যাতায়াতের সেই রাস্তায় রেল ওভারব্রিজের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। অবশেষে পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ার তপসিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে সেই ওভারব্রিজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বিভিন্ন জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে এখনও ২৩টি রেলপথ গিয়েছে। সেই বাধা দূর করতে নবান্নের তরফে ২৩টি রেল ওভারব্রিজের দাবি জানানো হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক তার ১৯টির অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলির মধ্যেই রয়েছে পাণ্ডবেশ্বর ও তপসির ওভারব্রিজ দু’টি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের কোথাও রেলের ক্রসিং না রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই ওভারব্রিজ তৈরি হবে। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘এ নিয়ে এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এখন তা প্রক্রিয়াকরণের পথে।’’
প্রায় এক দশক আগে সিউড়ি-রানিগঞ্জ রাস্তা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। এই রাস্তাটি দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম বড় মাধ্যম। কিন্তু তবে জাতীয় সড়কের মর্যাদা পেলেও আদতে রাস্তা দু’দিকে সম্প্রসারিত হয়নি। অথচ, যানবাহন চলাচল বেড়েছে। ফলে, সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। আর তা যেন বাড়িয়ে তুলছিল তপসি ও পাণ্ডবেশ্বরের রেলগেট দু’টি। দিনের অনেকটা সময় এই গেট বন্ধ থাকায় স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে সাধারণ যাত্রী, সকলকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে আসানসোল থেকে রেল ইয়ার্ড তপসিতে স্থানান্তর হয়। আগে তপসি স্টেশন দিয়ে সারা দিনে একটি অন্ডাল-বৈদ্যনাথধাম ট্রেন ও কিছু কোলিয়ারির কয়লার মালগাড়ি চলাচল করত। কিন্তু রেল ইয়ার্ড হওয়ার পরে নানা কল-কারখানার জিনিস আনা-নেওয়া করা শুরু হয় এই এলাকা দিয়ে। তার জেরে রেলগেট বন্ধ হয়ে থাকে। আসানসোল মহকুমা মিনিবাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘দিনে ৮৩টি মিনিবাস ওই দু’টি জায়গা দিয়ে যাতায়াত করে।’’ আসানসোল মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুয়ালিয়া জানান, ৬০টির বেশি দূরপাল্লার বাস আসানসোল থেকে বীরভূম ও মূশিদাবাদে আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে বহু মালবাহী গাড়ির নিত্য যাতায়াত এই পথে। সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘প্রায় সব গাড়িকেই তপসির ওই রেলগেট পেরোতে অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েন অফিস-যাত্রী ও রোগীরা।’’ রেল ওভারব্রিজ হলে মাল নিয়ে যাওয়া গাড়ির চালক-খালাসি থেকে নিত্যযাত্রী, সকলেই হাফ ছেঁড়ে বাঁচবেন।
পাণ্ডবেশ্বরের ডালুরবাঁধ মোড়ের কাছে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে গিয়েছে রেললাইন। বৈদ্যনাথপুরের তৃণমূল নেতা রবিন পাল বলেন, ‘‘ওই রেলপথ কোলিয়ারির কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয়। এখন বেশ কিছু কোলিয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মালগাড়ি চলাচল কমেছে। তবে ভোগান্তি শেষ হয়নি।’’ তাঁর দাবি, এর সঙ্গে পাণ্ডবেশ্বর স্টেশনের সামনে দুর্গাপুর যাওয়ার রাস্তার উপরেও রেলসেতু তৈরি করা দরকার। পাণ্ডবেশ্বর বণিক সংগঠনের সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পাণ্ডবেশ্বর রেলগেট লাগোয়া অংশটুকু প্রতি বছর সংস্কার হলেও বর্ষায় ফের খানাখন্দ হয়ে যায়। মাস তিনেক সমস্যা চরমে ওঠে।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, তপসিতে জাতীয় সড়কে একটি সেতু আছে, যেটি ছোট, বাঁকা ও মান্ধাতা আমলের। ফলে, অসুবিধায় পড়তে হয় চালকদের। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ওই পুরনো সেতুটির দিকেও নজর দেওয়া উচিত বলে দাবি শ্যামাপ্রসাদবাবুদের।
দু’টি ওভারব্রিজের অনুমোদনে খুশি এলাকাবাসী। তবে তাঁদের মতে, কাজ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তির কারণ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy