Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘জ্বরে গা পুড়ছে নাতির’

সকাল ৯টায় বহির্বিভাগের টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টাতেও ডাক্তার আসেননি দেখে ফিরে যান জওহরলালবাবু।

আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র

আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

স্থান: আসানসোল জেলা হাসপাতাল।

সময়: সকাল সাড়ে ১১টা। বহির্বিভাগে থিকথিকে ভিড়। তারই মাঝে সালানপুরের সামডির বাসিন্দা সারণি বাউড়ি সোজা ঢুকে পড়লেন সুপারের চেম্বারে। হাত জোড় করে বললেন, ‘‘কাকিমার বুকে জল জমেছে। সাতসকালে এসেছি স্যার। ডাক্তারেরা আসছেন না।’’ সব শুনে সুপার নিখিলচন্দ্র দাস খানিক যেন অসহায়। বললেন, ‘‘কিছু করার নেই। ১২টার আগে তো চিকিৎসা শুরু হবে না।’’

—কলকাতার এনআরএস-এ জুনিয়র ডাক্তারের উপরে হামলার প্রতিবাদে হাসপাতালে কর্মবিরতি করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তার মধ্যে উপরের ওই একটিমাত্র ঘটনা শুধু নয়। রোগী-হয়রানির এমন বহু ছবিই সামনে এসেছে।

১২টা নাগাদ চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া শুরু হলেও ততক্ষণে অনেকেই ফিরে যান। যেমন, আসানসোলের সেনর‌্যালের বাসিন্দা জওহরলাল শর্মা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সকাল ৯টায় বহির্বিভাগের টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টাতেও ডাক্তার আসেননি দেখে ফিরে যান জওহরলালবাবু। রহমতনগর থেকে মহম্মদ সামিম নাতি সাত বছরের শিশু ওয়াসিফকে নিয়ে এসেছিলেন। নাতির নাগাড়ে কান্না থামাতে থামাতেই বললেন, ‘‘কাল রাত থেকে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ওর। কিন্তু ডাক্তার কই?’’

এই গোটা পরিস্থিতিতে কার্যত অসহায়ের মতো দেখায় সুপারকে। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বহির্বিভাগের টিকিট কাটা হয়। অথচ অবস্থান-বিক্ষোভ চলায় কোনও চিকিৎসকই রোগী দেখেননি। শেষেমেশ অনুরোধে দুপুর ১২টায় রোগী দেখা শুরু করেন ডাক্তারেরা।’’

এ দিন সকাল থেকেই হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি করেন। তবে হাসাপাতালের জরুরি ও অন্তর্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষে সিনিয়র চিকিৎসক রহুল আমিন বলেন, ‘‘আমরা এই হাসপাতালেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। তাই এনআরএস-এর ঘটনার প্রতিবাদে প্রতীকী অবস্থান ও কর্মবিরতি পালন করলাম।’’ হাসপাতাল সুপারের কাছ থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় আশ্বাস মেলার পরে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন বলে জানান তিনি।

সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আসানসোল শাখার চিকিৎসকেরাও। সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রভাশচন্দ্র মাজি বলেন, ‘‘আমরা চেম্বারে যাইনি। শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও বহির্বিভাগ বন্ধ রাখা হয়। তবে প্রয়োজনে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।’’ সন্ধ্যায় শহরের গির্জা মোড় থেকে স্টেশন মোড় পর্যন্ত মোমবাতি মিছিলও করেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE