Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

তথ্য সংগ্রহে মিলছে সহযোগিতা, দাবি আশাকর্মীদের

করোনা-পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেওয়া, ‘কোয়েরান্টিন’-এ থাকা লোকজনের বাড়ি গিয়ে প্রতিদিন খোঁজখবর নিয়ে ‘রিপোর্ট’ তৈরি করার মতো নানা কাজে ভরসা আশাকর্মীরা।

বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন আশাকর্মীরা। দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায়। ছবি: বিকাশ মশান

বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন আশাকর্মীরা। দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায়। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০২:১২
Share: Save:

কালই এসেছিলেন, আজ আবার কেন—‘কোয়রান্টিন’-এ থাকা অনেকের বাড়িতে গিয়েই এমন প্রশ্ন শুনতে হচ্ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তথ্য সংগ্রহে গিয়ে অসহযোগিতার এই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে, অভিজ্ঞতা দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত আশাকর্মীদের।

করোনা-পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেওয়া, ‘কোয়েরান্টিন’-এ থাকা লোকজনের বাড়ি গিয়ে প্রতিদিন খোঁজখবর নিয়ে ‘রিপোর্ট’ তৈরি করার মতো নানা কাজে ভরসা আশাকর্মীরা।

দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় এমনই কাজ করছেন গোপীনাথপুর আমবাগানের বাসিন্দা আশাকর্মী চন্দনা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, সকালে নিজে যান। বিকেলে ফোন করে খোঁজ নেন। ছেলে সত্যজিৎ কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরি করেন। স্বামী শান্তনুবাবু বেসরকারি কারখানার কর্মী। এখন কাজ বন্ধ। বাড়িতে স্বামী, ননদ ও ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ নন্দাই। বাইরের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে ঘরের কাজও সামলাতে হয় তাঁকে। চন্দনাদেবী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন, “এলাকার অনেকেই পুণে, বেঙ্গালুরু থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁদের কাছে খোঁজখবর নিতে গেলে প্রথম দিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। প্রথম দিকে অনেকে কিছুতেই বুঝতে চাইতেন না। কেন গিয়েছি, বারবার কেন যাচ্ছি, এমন নানা প্রশ্ন করতেন। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।’’

সগড়ভাঙারই জ়ি ব্লকের আশাকর্মী কাবেরী বসুর স্বামী বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। এখন কাজ বন্ধ। বাড়িতে স্বামী, ছেলে, বৌমা ও বছর তিনেকের নাতি। চন্দনাদেবীর মতো কাবেরীদেবীরও একই অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে অনেক অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে প্রশাসন, পুরসভা, পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই।’’

এই অসহযোগিতা থেকে সহযোগিতায় উত্তরণেরই আর্জি জানাচ্ছেন ‘কোয়রান্টিন পর্ব’ পেরিয়ে আসা অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, “আশাকর্মী-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলেই জনসাধারণের জন্য লড়ছেন। আমরা যদি ওঁদের পাশে থাকি, তা হলেই লড়াইটা সফল হবে।”

লড়াই সফল হবে, এই প্রত্যয় আশাকর্মী মুক্ত দাস চট্টোপাধ্যায়েরও। বাড়িতে বছর পাঁচেকের মেয়ে রয়েছে। বেসরকারি কারখানার কর্মী স্বামীর এখন কাজ নেই। কাজ থেকে বাড়ি ফিরে মুক্তদেবী নিজেকে উপযুক্ত ভাবে জীবাণুমুক্ত করেন। কিন্তু তার পরেও স্ত্রীর জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন স্বামী মৃত্যুঞ্জয়বাবুর।

কিন্তু এই সব কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মিলছে তো? দুর্গাপুরের ওই আশাকর্মীরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আশাকর্মী জানান, প্রথম দিকে ‘মাস্ক’ মেলেনি। কোনও রকমে রুমালে মুখ ঢেকে কাজ করতে হয়েছে। নতুন দস্তানাও আসেনি। পুরনো দস্তানা পরে কাজ করতে হয়েছে। সেই অবস্থাতেই ‘কোয়েরান্টিন’-এ থাকা মানুষজনের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তবে পরের দিকে পরিস্থিতি বদলেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাখি তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “পুরসভা আশাকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।” এ ছাড়া, গত শুক্রবার দুর্গাপুরের ৪ নম্বর বরোর পক্ষ থেকে ৬৫ জন আশাকর্মীকে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’ ও খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Durgapur ICDS Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE