Advertisement
E-Paper

ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরলেই নজরে

জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, গত কয়েক দিনে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরে আসার পরেও অনেকে আত্মগোপন করে রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৫:২৮
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

এ বার ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা বাসিন্দাদেরও ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখার সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সে জন্য প্রতি ব্লকে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন, প্রত্যেক দিন বিকেলে বিএমওএইচ এবং পুলিশের বৈঠকের পরে, জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট পাঠানোর মতো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শুক্রবার। সেই সঙ্গে ৫০টির বেশি শয্যা রয়েছে, এ রকম বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিকে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, শনিবার জেলায় করোনা-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসার কথা কৃষি দফতরের প্রধান সচিব সুনীল গুপ্তের।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী (পূর্ব বর্ধমান) বলেন, ‘‘ভিন্‌ রাজ্য থেকে দলে-দলে স্থানীয় বাসিন্দারা ফিরে আসছেন। তাঁদের জন্য ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুদবুদ, খণ্ডঘোষের সগড়াই, মেমারি পুরসভা ও ভাতারের কর্জনায় ‘পথের সাথী’ রয়েছে। সেখানে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ হবে। নবদ্বীপের পর্যটকদের বড় অংশ আমাদের জেলায় আসেন। তাঁদের জন্যও পূর্বস্থলীর হেমায়েতপুর, কাটোয়া ও কালনা স্টেশনে স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জেলায় একটি ল্যাবরেটরি তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, গত কয়েক দিনে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরে আসার পরেও অনেকে আত্মগোপন করে রয়েছেন। তাঁদের জন্য গ্রামে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাঁদের খুঁজে বার করার জন্য স্বাস্থ্য দফতর আশাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে। জেলা পুলিশের তরফে সিভিক ভলান্টিয়ারদের খবর দিতে বলা হয়েছিল। এ বার সেই কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও লাগানোর নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক। জেলায় প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মানুষের ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিদেশ থেকে এসে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রয়েছেন ১৮২ জন। ভিন্‌ রাজ্য থেকে এসে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রয়েছেন প্রায় ৪,৩৫২ জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস এ বার এলাকা থেকে এলাকায় ছড়াতে শুরু করেছে। সে জন্য কয়েকটি রাজ্য থেকে গত ১০ দিনে আমাদের জেলায় এসেছেন, এমন বাসিন্দাদের ‘হোম কোয়রান্টিন’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরল, হায়দরাবাদ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা বাসিন্দাদের ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বৈঠকে নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে সিএমওএইচ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আর্জি জানান। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সোমবার দুপুরে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে অনেকেই নজর রাখছেন। তার পরেও জেলার ৪৩৭টি ক্লাবকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকা বাসিন্দাদের উপরে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। ক্লাবগুলির কাছে সেই এলাকার ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকা বাসিন্দাদের নাম, মোবাইল নম্বর পৌঁছে দেওয়া হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদেরও দেখতে বলা হয়েছে।’’ এ দিন ঠিক হয়েছে, জেলায় আরও দু’টি ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্র করা হবে। সে জন্য নির্মীয়মাণ দু’টি আইটিআই ভবনকে ব্যবহার করার কথা ভেবেছে প্রশাসন। তার মধ্যে একটি ভবঘুরে বা গৃহহীনদের জন্য ‘হোম কোয়রান্টিন’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে চারটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হবে। এ ছাড়া, এক হাজার লিটার স্যানিটাইজ়ার তৈরি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মাস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিকে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আর একটি পৃথক ওয়ার্ড রাখতে হবে। নার্সিংহোমে অযথা ভিড় করার প্রবণতা এড়াতে বলা হয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের ভিতরে যাওয়া নিয়ে কড়াকড়ি করতেই হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে ১৪টি নার্সিংহোমকে প্রশিক্ষণ ও নির্দেশিকা দেওয়া হবে।’’

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে এক জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কালনা মহকুমা হাসপাতালে পরীক্ষা চলছে আট জনের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে এক জন সম্প্রতি কাতার থেকে ও বাকিরা নানা রাজ্য থেকে ফিরেছেন। শুক্রবার বিকেলে বিহার থেকে ফেরা এক যুবক ট্রেন থেকে নেমেই কালনা হাসপাতালে আসেন। তবে কোনও উপসর্গ না থাকায় তাঁকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কালনা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই। মহকুমাশাসক (কালনা) সুমনসৌরভ মোহান্তি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে।

জেলার নানা প্রান্তের অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ ব্যবহার করে নানা গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস প্রশাসনের কর্তাদের।

Coronavirus Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy