Advertisement
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
Road Problem

‘আমাদের ভরসা খাটিয়াই’, মালদহকাণ্ড শুনে বর্ধমানের গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এ ভোগান্তি পুরনো

বর্ধমান সদরের একটি গ্রাম বণ্ডুল। প্রান্তিক এলাকা। মূলত আদিবাসীদের বাস। গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা বট-অশ্বত্থ এবং নানা বড় বড় গাছে ঢাকা। রয়েছে অজস্র ঝোপঝাড়। মেঠো পথ ধরেই চলে যাতায়াত।

cot

১০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে ভরসা ওই খাটিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৬
Share: Save:

এখানে রাজ্যের ‘পথশ্রী’ প্রকল্প পৌঁছয়নি। কেন্দ্রের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত তামাম গ্রাম। গ্রামের প্রবীণেরা যখন যুবক ছিলেন প্রতিবেশীরা কেউ অসুস্থ হলে খাটিয়ায় বয়ে নিয়ে দৌড়তেন। এখন রাতবিরেতে তাঁরা অসুস্থ হলেও গ্রামের যুবকদের ভরসা সেই খাটিয়া। মালদহের বামনগোলায় মালডাঙা গ্রামের অসুস্থ রোগিণীকে খাটিয়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বর্ধমান সদরের বণ্ডুল গ্রামের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘এ আর নতুন কী?’’ তাঁরা যে এখনও গ্রামের অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে খাটিয়া ব্যবহার করেন, এ কথা স্থানীয় প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু তবু রাস্তা তৈরি হয় না!

পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান সদরের একটি গ্রাম বণ্ডুল। প্রান্তিক এলাকা। মূলত আদিবাসীদের বাস। গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা বট-অশ্বত্থ এবং নানা বড় বড় গাছে ঢাকা। রয়েছে অজস্র ঝোপঝাড়। মেঠো পথ ধরেই বছরের পর বছর চলছে যাতায়াত। ভোগান্তি চরমে পৌঁছয় বর্ষায়। কাদা-গর্ত ভরা রাস্তায় থাকে সাপের ভয়। তার মধ্যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতায়াত? হ্যাঁ। তখনও ভরসা সেই খাটিয়া। বণ্ডুলের বাসিন্দা বাবু বেসরা, দুলন সর্দার, রবিলাল বাস্কেরা জানাচ্ছেন, তাদের এই দুর্ভোগের পথ বিশাল। ১০ বছর ধরে অনেক আবেদন-নিবেদন করে আসছেন। পঞ্চায়েত থেকে বিডিও, বিধায়ক থেকে জেলা পরিষদ কিংবা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ— প্রশাসনের দরজায় দরজায় বার বার কড়া নেড়েছেন। পথের দাবিতে আন্দোলনও করেছেন। কিন্তু নিটফল শূন্য।

মালদহের মালডাঙা গ্রামের রোগী-মৃত্যুর পর নানা মহলে নানা প্রতিক্রিয়া এসেছে। তার মধ্যে গত শনিবারই বর্ধমানে এসে রাজ্যের গ্রন্থাগ্রার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান, রাস্তা খারাপ হলে কেউ মারা যান না। মারা যান ভাগ্য খারাপ হলে। এ সব শুনে বণ্ডুলের বাসিন্দারা বলছেন, এ দুর্ভোগ তো তাঁদের চেনা। গ্রামের ভিতরে আসা যাওয়া করতে তাঁদের প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। গ্রাম থেকে হাসপাতাল প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। স্কুল-অফিসও অনেকটা দূরে। ভোট আসে ভোট যায়। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভরসা সেই খাটিয়া।

সমস্যার কথা শুনে প্রশাসন আবার অন্য কথা বলছে। বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কাকলি তা গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘হঠাৎ করে ওই পাড়াটি গ্রামের ভিতরে গড়ে তুলেছেন আদিবাসীরা। তাঁরা আত্মীয় এনে বসতি বাড়িয়েছেন। পাড়ার ভিতরে কিছুটা রাস্তা হলেও মূল রাস্তার সঙ্গে এখনও সংযোগ স্থাপন হয়নি।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘‘একটি পরিবার বারো কাঠা জায়গা দিলে ওই রাস্তা হতে পারে। কিন্তু কে-ই বা তা দেবে? এ নিয়ে জটিলতা আছে। জমি অধিগ্রহণও হয়নি।’’ অন্য দিকে, বিরোধীরা বলছেন, মালদহের বামনগোলায় যা ঘটেছে, তা বণ্ডুলেও যে কোনও দিন ঘটতে পারে। প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য গৌরব সমাদ্দারের কথায়, ‘‘মালদহের বামনগোলার ঘটনা সভ্যতার লজ্জা। এই একই ঘটনা ঘটতে পারে পূর্ব বর্ধমানের বণ্ডুলে। এখানেও মধ্যযুগীয় পন্থায় খাটিয়া করে রোগী নিয়ে যেতে হয়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কোথায় পথশ্রী? কোথায় রাস্তাশ্রী?’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে তা নেতাদের উন্নয়ন। মালদহের ঘটনা পূর্ব বর্ধমানেও ঘটতে পারে। বিপদে পড়েই মানুষ এখন মুখ খুলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE