লাগাম নেই বালি চুরির। — ফাইল চিত্র।
জেলার বড় অংশ জুড়ে বইছে চার নদী। দামোদর, অজয়, দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী— এই চারটি ছাড়াও একাংশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। নদীর চরের বালি তোলার রাশ নিয়ে চাপান-উতোর নতুন নয়। ভোটের অঙ্কও ঘুরপাক খায় এই কারবার ঘিরে। রাজনীতির কারবারিরাও জানেন, বালির ঘাটের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে ভোট-রাজনীতিতে পারাপার হতে অসুবিধা হবে না। সে কারণে কার্যত সব আমলেই দামোদর-অজয় লাগোয়া গ্রামগুলিতে এলাকা দখলের লড়াই চলতে থাকে। চলতি পঞ্চায়েত ভোটও তার ব্যতিক্রম নয়।
দামোদরের পাড়ে বালি-অঞ্চল বলে পরিচিত খণ্ডঘোষ, জামালপুর, রায়নার বিস্তীর্ণ এলাকা। এ ছাড়া, গলসি ও বর্ধমান শহর লাগোয়া দামোদর থেকেও বালি তোলা হয়। আর অজয়ের পাড়ে রয়েছে মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম। বাম আমল থেকেই এই সব এলাকায় বালি পাচারের অভিযোগ উঠেছে। আবার বৈধ খাদানকে সামনে রেখে বালি পাচার, নির্ধারিত বহন ক্ষমতার থেকে বেশি বালি তুলে (ওভারলোডিং) পরিবহণের অভিযোগও ওঠে। বর্তমান সরকারের আমলে ই-চালানেও জালিয়াতি করে বালি পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ভিন্ জেলার খাদানের ই-চালানের মাধ্যমে খণ্ডঘোষ-সহ বিভিন্ন এলাকার বালি পাচারের অভিযোগ ওঠে।
এই বালি কারবার ঘিরে অশান্তিরও অন্ত নেই। মাসখানেক আগেই খণ্ডঘোষের শশঙ্গায় বালির গাড়ির যাতায়াতের উপরে টোল আদায়ের অফিসে অগ্নিসংযোগ হয়। অভিযোগ ছিল, বেআইনি ভাবে বালি বোঝাই ট্রাক থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছিল। বর্ধমান শহর লাগোয়া ইদিলপুরে বালি খাদানের দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিও চলেছে। কয়েক মাস আগে, রায়নার শুকুরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন এক জন। এর নেপথ্যেও বালি কারবারের ঘটনা রয়েছে বলে এলাকার অনেকের দাবি। বালি কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগে রায়না, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৫ সালে রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থাকাকালীন খুন হন তৃণমূল নেতা আব্দুল আলিম। আউশগ্রামে বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগে পুলিশ এক তৃণমূল নেতার ভাইকে গ্রেফতারও করেছিল।
বেআইনি ভাবে বালি তোলার ফলে নদীতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। তাতে দুর্ঘটনাও ঘটে। কয়েক বছর আগে গলসিতে দুর্ঘটনায় এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়। ক্ষোভের আঁচ পড়ে খাদানের অফিসে। কয়েক দিন আগে রায়নায় স্নান করতে গিয়ে ডুবে মারা যান বালির ট্রাকের চালক। কেতুগ্রামের রসুইয়ে হাঁটু জলের অজয়ে নেমে গর্তে পড়ে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। মঙ্গলকোটের শ্যামবাজারে বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় এক দম্পতির মৃত্যুতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে।
ঘটনার পরে শাসক-বিরোধী সব দলই বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে সরব হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দুর্ঘটনায় আহত বা মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালায়। ফের ধীরে ধীরে কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।বালি কারবারের খবর রয়েছে সব পক্ষের কাছেই। কিন্তু এই কারবারে যুক্ত বহু মানুষ। বেআইনি কারবার বন্ধে কড়া পদক্ষেপ তাই অধরাই। ভোট বড় বালাই। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy