Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
Kanksa

বালির বাঁধে আটকায়নি জল, সমস্যা

কাঁকসার আয়মা, গাংবিল থেকে সিলামপুর গ্রামের শেষ পর্যন্ত প্রতি বছরই বর্ষার সময় দামোদরের জলে প্লাবিত হয়।

Damodar River eroding lands at kanksa

এ ভাবেই দামোদরের পাড় ভাঙছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে বালির বস্তার বাঁধও। কাঁকসার সিলামপুরে। নিজস্ব চিত্র

বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৫
Share: Save:

দামোদরের হাওয়া, জল বারো মাস গায়ে লাগে তাঁর। সালটা ২০১৭, বর্ষার সময়। এই দামোদরই আতঙ্ক হয়ে দেখা দিল কাঁকসার সিলামপুরের লিয়াকত আলির জীবনে। দামোদরের জলে ডুবে যায় বাড়ি। পরিবার নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ঠাঁই হয় স্থানীয় একটি স্কুল ভবনে। — এর পরে, প্রায় ছ’টা বছর গড়িয়েছে। বাড়িও সংস্কার হয়েছে একটু-একটু করে। কিন্তু সেই রুদ্র দামোদরের স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায় লিয়াকত-সহ কাঁকসার বেশ কয়েকটিগ্রামের বাসিন্দাদের।

Advertisement

ফের দুয়ারে কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত ভোট। ফের চর্চায় উঠে আসছে দামোদরের ভাঙন। বিরোধীদের দাবি, এই চিরন্তন সমস্যার সমাধানে এ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন, পঞ্চায়েত। যদিও, তৃণমূল সে অভিযোগ মানেনি। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে কাঁকসা ব্লক প্রশাসন বালির বস্তা দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে। কিন্তু বর্ষার জলে তা ভেঙেও যায়। তাঁরা দাবি জানাচ্ছেন, স্থায়ী বাঁধের। ভাঙন রোধে বছর চারেক আগে কাঁকসা ব্লক প্রশাসন দামোদরের পাড়ে, সিলামপুরে একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে ‘ভেটিভার’ ঘাসও লাগিয়েছিল। ঘাস বাঁচাতে সে জায়গা ঘিরেও রাখা হয়। কিন্তু অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সে ঘাস খেয়েছে গবাদি পশুতে।

কাঁকসার আয়মা, গাংবিল থেকে সিলামপুর গ্রামের শেষ পর্যন্ত প্রতি বছরই বর্ষার সময় দামোদরের জলে প্লাবিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই সব গ্রামের বহু চাষ জমি এখন নদের জলে তলিয়ে গিয়েছে। ২০১৭-য় বর্ষার সময়ে সিলামপুর, বিহারপুর, কেটেনের মতো গ্রামের একাংশ দামোদরের জলে ডুবে গিয়েছিল। বেশ কয়েক দিন জলমগ্ন ছিল এলাকা। আবার ২০২১-এ নদের জল বেড়ে যাওয়ায় সিলামপুরের বহু মানুষকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হন।

সিলামপুরের বাসিন্দা খাদেম মোহর আলি জানান, প্রতি বছর নদের জলে একটু-একটু করে পাড় ভাঙছে। এক সময় যেখানে চাষের জমি ছিল, এখন সেখানে দামোদরের চর। খাদেম দামোদরের দিকে কার্যত শূন্য চোখে তাকান। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তাকিয়ে বলেন, “ওই খানে আমার প্রায় ২০ বিঘা জমি আছে!”— চেয়ে দেখা গেল, ‘ওই খানে’ এখন নদের চর, বালি। জমি উধাও। সিলামপুরের ধনু মীর, আয়মার তপন ঘোষেরাও জানাচ্ছেন, আয়মা থেকে সিলামপুর— এই তিন কিলোমিটার অংশ সব থেকে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। প্রতি বছর বর্ষার জলে অনেকটা করে জমি নদের গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, “এখন যে দিকে জল বইছে, সেই জায়গায় এক সময় চাষাবাদ করতেন স্থানীয়েরা। এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সিলামপুর, আয়মার মতো গ্রামের একাংশ দামোদরে তলিয়ে যাবে।”

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্বও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “খয়রাতির রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে পারেনি এই সরকার। তাই ভাঙন সমস্যারও সমাধান হয়নি।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, “বাম আমলেও কিছু হয়নি। এই আমলেও কিছু হচ্ছে না। শুধু দুর্নীতি, করে খাওয়ার রাজনীতির ফল ভুগছেন জনসাধারণ।” দু’পক্ষই বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে প্রচার চালানোর কথাও বলেছে। যদিও, তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের প্রধান চয়নিকা পালের বক্তব্য, “ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন বিরোধীরা। শুধু পঞ্চায়েতের পক্ষে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমরা যেখানে যা জানানোর, তা জানিয়েছি।” পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমীর বিশ্বাস বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.