Advertisement
E-Paper

বাড়ছে বসতি, নদীর ভাঙনে চিন্তা

বছরভর নদীর চেহারা দেখে মনে হয় নালা। নাব্যতা না থাকায় বর্ষায় দুকূল উপচে ঘর ভাসায় সেই কুনুরই। মুক্তির উপায় নিয়ে কী বলছেন নাগরিকেরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কুনুর নদীর উৎসস্থল পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ার কাছেই ঝাঁঝরা গ্রাম। সেখান থেকে লাউদোহা, কাঁকসা, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, এই চারটি থানা এলাকার মোট ১১২ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুনুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:২১
নদী যেখানে নালার মতো সরু। নিজস্ব চিত্র

নদী যেখানে নালার মতো সরু। নিজস্ব চিত্র

ফি বছর বর্ষা এলেই চিন্তা বাড়ে মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, প্রতি মুহূর্তে ভয় হয়, এই বুঝি কুনুরের গর্ভে তলিয়ে গেল জমি-বাড়ি। সংস্কারের অভাবের পাশাপাশি বাড়তে থাকা জনবসতির কারণেই এই বিপত্তি বলে ধারণা নাগরিক ও পরিবেশকর্মীদের একাংশের।

কুনুর নদীর উৎসস্থল পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ার কাছেই ঝাঁঝরা গ্রাম। সেখান থেকে লাউদোহা, কাঁকসা, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, এই চারটি থানা এলাকার মোট ১১২ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুনুর। মঙ্গলকোট ব্লকে সারঙ্গপুরের কাছে নদীটি প্রবেশ করেছে। তার পরে ব্লকের সরুলিয়া, উজিরপুর, জালপাড়া, পশ্চিম গোপালপুর, গোতিষ্ঠা প্রভৃতি জায়গা দিয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে তা কোগ্রামে অজয়ের সঙ্গে মিশেছে।

কিন্তু এই নদী নিয়েই দুশ্চিন্তা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ মুখোপাধ্যায়, শেখ রাকিবুলেরা জানান, পলি পড়ে নদী মজে যেতে বসেছে। স্রোত অবরুদ্ধ। কুনুরের ভাঙনে মূলত পশ্চিম মঙ্গলকোটের চারটি পঞ্চায়েত চানক, গোতিষ্ঠা, মঙ্গলকোট ও লাখুরিয়ার ১২-১৩টি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। তা ছাড়া বৃষ্টির জেরে অজয়ে জল বাড়লে ওই সব এলাকাগুলিকে প্লাবিত করে অজয়ের উপনদী কুনুর।

মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা যায়, চানক পঞ্চায়েতের বালিডাঙা কলোনির প্রায় আটটি বাড়ির বাসিন্দারা এখন নদী-ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এমনকি, গত বছর সেখানের পাঁচটি পরিবার এলাকা ছেড়েছে। এ ছাড়া, পিলসোঁয়া গ্রামের আউলচাঁদের সমাধি একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। সমাধি লাগোয়া এলাকাও ভাঙনে তলিয়ে যাওয়ার মুখে বলে এলাকাবাসী জানান। প্রজ্জ্বল মল্লিক নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কুনুরের জল চাষের কাজে ব্যবহার করা যায় না। উল্টে, কখন জমি-বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে, সেই আশঙ্কা থাকে।’’

এই পরিস্থিতির নেপথ্যে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। প্রথমত, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুনুরের দু’পাড়ে জনবসতি বেড়েছে। ফলে সহযোগী নালাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বৃষ্টির জল নদীতে না আসায় বিপত্তি বাড়ে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নদীতে চর জেগে উঠছে। তাতে আগাছা জন্মেছে। কোথাও বা এমন পরিস্থিতি, যে নদী না বলে ক্যানাল বলাটাই ভাল, জানান এলাকাবাসীই। দ্বিতীয়ত, ভৌগোলিক ভাবে অজয়ের জলের উচ্চতা কুনুরের থেকে বেশি। তাই গুসকরার বসতপুরের কাছে অজয়ের জল কুনুরে ঢুকে পড়ে বিপত্তি ঘটায়, এমনটাই মনে করেন ভূগোলের শিক্ষক টোটোন মল্লিকের মতো অনেকেই।

তবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবর্ষে ৩০লক্ষ টাকায় নদীটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়। নদীর কিছু অংশের মাটি কেটে চওড়া করে নাব্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পাড়ে জড়ো করা মাটির স্তূপ ধুয়ে ফের নদীতেই গিয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে কী হলে সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।

Mngalko River bed Errosion Kunur River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy