ব্যস্ত পুলিশকর্মীরা। দুর্গাপুরের বিধাননগরে রবিবার। ছবি: বিকাশ মশান
পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি। — চার জেলার পুলিশের তৎপরতায় নির্বিঘ্নে দুর্গাপুর থেকে এসএসকেএমে পৌঁছল কিশোরী মধুস্মিতা বায়েনের (১৩) অঙ্গ। পুলিশের এই তৎপরতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজের নানা অংশের মানুষ।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, এসএসকেএমের চিকিৎসকদের যাতে দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালে পৌঁছতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় তার জন্য বুদবুদ থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। অঙ্গ নিয়ে ফেরার পথে ফের শুরু হয় নিয়ন্ত্রণ।
পরিকল্পনা মতো হাসপাতাল থেকে অঙ্গ নিয়ে গাড়ি মুচিপাড়ায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গিয়ে পড়ে। নিউ টাউনশিপ, কাঁকসা ও বুদবুদ, এই তিন থানা এলাকার পুলিশকর্মীরা যাত্রাপথের প্রতিটি মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। ছিল, অন্তত ১০টি মোবাইল টিম। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘দু’জন ডিসিপি, তিন জন এসিপি ও প্রায় দু’শো জন পুলিশকর্মী গ্রিন করিডর তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন।’’
এসএসকেএম থেকে চিকিৎসক দল কমিশনারেট এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির দায়িত্ব নেয় পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। বর্ধমান শহর থেকে জাতীয় সড়কে ওঠার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, নবাবহাট মোড় ও উল্লাস মোড় সাময়িক ভাবে অন্য সব গাড়ির জন্য বন্ধ রাখা হয়। যে সব স্থানে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। যাতে কোনও ট্রাক ওই সময়ে রাস্তায় উঠে আসতে না পারে, সে দিকে বিশেষ নজর ছিল পুলিশের। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় জানান, একই সঙ্গে জেলার থানা ও ট্র্যাফিককে গ্রিন করিডরের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান পেরনোর পরেই খবর পৌঁছয় হুগলি জেলা পুলিশের কাছে। গুড়াপ থেকে ডানকুনি পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিটি থানার পুলিশকর্মীরা গ্রিন করিডরের জন্য কর্ডন করে রাস্তায় ছিলেন। যে সব মোড় দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলে আসার সুযোগ রয়েছে, সেই সব এলাকায় সাময়িক ‘নো-এন্ট্রি’ করে দেওয়া হয়। ডানকুনি টোল প্লাজা, সিঙ্গুরের আলুর মোড়, ধনেখালির মহেশ্বরপুর মোড়ে বিশেষ সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্র্যাফিক) মৃণাল মজুমদার বলেন, ‘‘মাইতিপাড়া সেতু পর্যন্ত জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করা হয়।’’ ডানকুনি টোলপ্লাজার ‘ভিআইপি লেন’ ফাঁকা রাখা হয়।
হুগলি পার হওয়ার পরে সক্রিয় হয় হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ জেলার মধ্যে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের তিন কিলোমিটার অংশ ‘গ্রিন করিডর’ করা হয়, পাকুড়িয়া থেকে খেঁজুরতলা পর্যন্ত। এই রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৫ জন পুলিশকর্মী, ৩০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার, বেশ কয়েক জন পদস্থ আধিকারিক এবং হাওড়া গ্রামীণ জেলা র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় ছিলেন পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে কলকাতা থেকে। এমন কাজে যুক্ত থাকতে পেরে খুশি পুলিশকর্মীরাও। দুর্গাপুরের একাধিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘টানা প্রায় ১০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু এমন একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে এক বারের জন্যও ক্লান্ত লাগেনি। নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।’’
দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালের মেডিকেল সুপার পার্থ পালও বলেন, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে পুরো ব্যবস্থা করেছে। আমরাও সব রকম সহযোগিতা করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy