প্রতীকী ছবি।
অনলাইনে প্রতারণা করে ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে পরে, এ বার চেক জালিয়াতি করে টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। শহরের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ‘মা ক্যান্টিন’-এর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৯৭ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার কালনা থানায় অভিযোগ করলেন কালনা পুরসভা কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত শুরু করার পরেই জানা যায়, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৯৯ হাজার টাকা তোলার জন্য আর একটি ‘নকল’ চেক জমা পড়েছে কলকাতায় এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে লেনদেন আটকানো হয়েছে।
গত এক মাসের মধ্যে কালনার ভাদুড়িপাড়ায় এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় দু’জন গ্রাহকের ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বার কালনা কলেজের কাছে অন্য এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার অ্যাকাউন্টে প্রতারণার অভিযোগ উঠল। কালনা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার দেওয়ার ‘মা ক্যান্টিন’ প্রকল্প কিছু দিন আগে চালু করা হয়েছে। সে জন্য ওই ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বুধবার পুরসভার কর্তারা জানতে পারেন, একটি চেক ব্যবহার করে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৭,৩৪৭ টাকা তোলা হয়েছে। পুরসভার ফিনান্স অফিসার অংশুমান বসু পরীক্ষা করে দেখেন, ওই চেকটি জাল। তাতে যে স্ট্যাম্প ও সই ব্যবহার করা হয়েছে, তা নকল।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অংশুমানবাবু বিষয়টি পুরসভার প্রশাসক আনন্দ দত্ত ও কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের নজর আনেন। বৃহস্পতিবার তিন জন ওই ব্যাঙ্কে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান, পুরসভা থেকে এই চেক দেওয়া হয়নি। ‘প্রতারকেরা’ যে চেকটি ব্যবহার করে টাকা তুলেছে, তাতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ভাল করে পরীক্ষা করলেই তা ধরা পড়ে যেত বলে দাবি তাঁদের। কেন ব্যাঙ্কে তা ভাল ভাবে পরীক্ষা করা হয়নি, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ঘটনায় যদি ব্যাঙ্কের কেউ জড়িত থাকেন, খুঁজে বার করার দাবিও জানানো হয়। পুরসভার কেউ জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে
পুর-কর্তারা জানান।
বিধায়ক পুরসভার কর্তাদের ব্যাঙ্কে পুরসভার প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ব্যাঙ্কে পৌঁছন কালনা থানার ওসি রাকেশ সিংহ। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু হলে জানা যায়, কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় ৯৯,৩০০ টাকার আর একটি নকল চেক জমা পড়েছে। প্রতারকেরা যাতে সেটি ভাঙাতে না পারে, সে জন্য অ্যাকাউন্টটির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এই ঘটনায় তাঁদের কোনও কর্মী জড়িত নন। কলকাতায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় ২ সেপ্টেম্বর চেকটি জমা পড়ে। ১০ সেপ্টেম্বর পুরসভার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর হয়। ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার অসীমকুমার ঘোষ জানান, বিষয়টি কলকাতার ওই ব্যাঙ্কের নজরে আনা হয়েছে। যে অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছেছে, সেটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত এক লক্ষ বা তার বেশি টাকার চেক হলে ব্যাঙ্কের তরফে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হয়। সম্ভবত সে কারণেই প্রতারকেরা এক লক্ষের কম টাকার চেক জমা দিয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ কালনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে। আজ, শুক্রবার একটি দল তদন্তে কলকাতায় যাবে।
বিধায়ক বলেন, ‘‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থও লুট করে নেওয়া হচ্ছে। চিন্তার ব্যাপার। পুলিশ এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বিশদে তদন্ত করতে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy