পরিত্যক্ত চালকলে ঢুকে নানা যন্ত্র ও লোহার সামগ্রী ট্রাকে বোঝাই করছে দুষ্কৃতীরা, গভীর রাতে খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ ওই চালকলের একাংশ ঘিরে ফেলে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ভোরে ভিতরে ঢুকে পড়ে পুলিশ। কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলা গেলেও, বাকিরা চালকলের পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করে। তাড়া করে ধরে পুলিশ। শনিবার মেমারির পলশা গ্রামে ১৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে চার জনকে ‘মূল চক্রী’ বলে দাবি করেছে পুলিশ। রবিবার তাদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর ধরে ওই চালকলটি বন্ধ রয়েছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে চত্বর। মূল দরজায় লেখা রয়েছে, ‘এই চালকলের কাছ থেকে ধান ব্যবসায়ী ও চাষিরা তিন কোটি টাকা পাওনা রয়েছে’। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছে, চালকলটি এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সম্পত্তি। নিরাপত্তার জন্য বর্ধমানের এক সংস্থাকে ব্যাঙ্ক দায়িত্ব দেয়। সেটির সচিব, দেওয়ানদিঘির ছোটবেলুন গ্রামের উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় স্থানীয় পালিতপুর গ্রামের ভাঙা লোহার ব্যবসায়ী খোদাবক্স মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় তাদের জানিয়েছে, চালকলের যন্ত্র ও লোহার সামগ্রী নিয়ে উজ্জ্বলের সঙ্গে খোদাবক্সের আড়াই লক্ষ টাকার ‘রফা’ হয়। শুক্রবার গভীর রাতে ট্রাক নিয়ে খোদাবক্স, তাঁর ছেলে সুজন মোল্লা ও তাঁদের ‘সহযোগী’ শেখ সালাউদ্দিন ওই চালকলে ঢোকেন। বর্ধমান ও দেওয়ানদিঘি থেকে হাজার টাকা মজুরির আশ্বাসে জনা কুড়ি শ্রমিক আনা হয়।
অভিযানে থাকা এক পুলিশকর্মীর দাবি, ‘‘আমরা গভীর রাত থেকে চালকলটি ঘিরে পাহারা দিচ্ছিলাম। মেমারি থানা থেকে আরও পুলিশ এলে ভিতরে ঢুকি। দেখা যায়, ট্রাকে যন্ত্রপাতি তোলা হচ্ছে। কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। কয়েক জন পালাতে গেলে তাড়া করে ধরি।’’ ওসি (মেমারি) সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আর কারা জড়িত, সে নিয়ে ধৃত উজ্জ্বল, খোদাবক্স, সুজন ও সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ জানায়, চালকলটির পুরনো মালিক অনুপম যশ ২০০৫ সাল থেকে এক জনকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। স্থানীয় হৈড়গ্রামের সেই বাসিন্দা রামনারায়ণ চন্দ্র পুলিশে অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার গভীর রাতে কয়েক জন চালকলে ঢুকে তাঁকে ভয় দেখিয়ে বসিয়ে রাখে। আওয়াজ করতে নিষেধ করে। তার পরে তারা চালকলের জিনিসপত্র খুলে একটি ট্রাকে তুলতে শুরু করে। একেবারে শেষ পর্যায়ে পুলিশ এসে পড়ে।
এলাকাবাসীর দাবি, ওই এলাকাতেই বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত চালকল রয়েছে। সেখানেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, এ নিয়ে ধৃতদের জেরা করা হবে।