Advertisement
E-Paper

মোটরবাইক থেকেই টান গলার হারে

সবে অন্ধকার নামছে। রাস্তায় বিশেষ লোকজন নেই। দোকান-বাজার সেরে বা কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছেন মহিলা। হঠাৎই দ্রুত গতিতে ধেয়ে এল মোটরবাইক। পথচারী মহিলার গলার হার ধরে টান দিলেন চালকের পিছনে বসে থাকা আরোহী।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সবে অন্ধকার নামছে। রাস্তায় বিশেষ লোকজন নেই। দোকান-বাজার সেরে বা কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছেন মহিলা। হঠাৎই দ্রুত গতিতে ধেয়ে এল মোটরবাইক। পথচারী মহিলার গলার হার ধরে টান দিলেন চালকের পিছনে বসে থাকা আরোহী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হার ছিনতাই করে পালিয়ে গেল মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বছর কয়েক আগে এমনটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় নিত্য ঘটনা। শহরের ছোট-মাঝারি রাস্তায় একের পর এক এই ধরনের দুষ্কর্মের জেরে সন্ধের মুখে চলাফেরা করার সময়ে আতঙ্কে থাকতেন মহিলারা। ২০০৯ থেকে ২০১১-র মধ্যে সোনার দাম যে ভাবে বেড়েছে, গলার হার ছিনতাইও যেন তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে। একটা সময়ে ঘনঘন ঘটা এই দুষ্কর্ম এখন অনেকটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি দুর্গাপুরে। পুলিশের দাবি, বছর চার-পাঁচ আগে যে চক্রটি এই কাজ করত তা ভেঙে গিয়েছে।

২০১০ সালের মাঝামাঝি সিটি সেন্টার, সেপকো ও ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক বার এ ভাবে হার ছিনতাই হয়। মার্কনির ৪ নম্বর স্ট্রিটে গলার হার ধরে দুষ্কৃতীদের টানাহ্যাঁচড়ায় প্রৌঢ়ার গলা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। ২০১১ সালের অগস্টে এক বিকেলে সেপকো টাউনশিপে আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে পার্কে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। পথে মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা হ্যাঁচকা টানে তাঁর হার কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। ২০১৩-র মার্চে সিটি সেন্টারের মৌলানা আজাদ রোডে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় বাড়ির কাছে দোকান থেকে সবজি কিনছিলেন এক মহিলা। সেই সময়ে মোটরবাইকে চড়ে দুই দুষ্কৃতী হাজির হয়। গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। আহত হন মহিলা।

আক্রান্ত মহিলাদের বয়ান অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের ধরন ছিল একই রকমের। ভারী ইঞ্জিন ও চড়া ‘পিক-আপ’-এর মোটরবাইকে চড়ে আসত দুষ্কৃতীরা। চালকের পিছনে বসে থাকত এক জন। পথচারী মহিলার একেবারে কাছে এসে গতি খুব কমিয়ে দিত তারা। পিছনে বসে থাকা দুষ্কৃতী টান মারত হার ধরে। তার পরে মোটরবাইকের গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যেত। ঘটনার আকস্মিকতায় মহিলারা না ঠিক ভাবে দেখতে পেতেন ওই দুষ্কৃতীদের মুখ, না খেয়াল করতেন তাদের মোটরবাইকের নম্বর।

• ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বছর চারেক দুর্গাপুরের নানা রাস্তায় পথচারী মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাই।

• পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময়ে মহিলার গলার হার ধরে টান দিত চালকের পিছনে বসে থাকা দুষ্কৃতী। আহত হন বহু মহিলা।

• চুরির চক্র চালানোর অভিযোগে মোট চার জনকে ধরেছিল পুলিশ।

• অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত। চক্র ভেঙে গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ জানায়, এমন বেশ কিছু হার ছিনতাইয়ের পরে অন্য এক ঘটনার সূত্রে একটি চক্রের হদিস মেলে। মোটরবাইক চুরিতে জড়িত সন্দেহে বাঁকুড়া থেকে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, তাকে জেরা করে জানা যায়, সে হার ছিনতাই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তার কাছ থেকে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে দুর্গাপুরের নানা জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও তিন জনকে। পরে অভিযুক্তেরা জামিন পায়। কমিশনারেটের আধিকারিকেরা দাবি করেন, এই গ্রেফতারির পরে হার ছিনতাই কমে যায় শহরে।

তবে তা যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, চলতি বছরের নানা ঘটনাতেই পরিষ্কার। এপ্রিলে নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার শঙ্করপুরে বছর তিনেকের নাতিকে নিয়ে দোকান থেকে ফেরার সময়ে মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন এক মহিলা। হ্যাঁচকা টানে অর্ধেক হার ছিনিয়ে পালানোর সময়ে দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে যান এলাকায় টিভির কেব্‌ল মেরামতির এক মিস্ত্রি। দুষ্কৃতীরা তাকে গুলি করে পালায়। সেপ্টেম্বরে সেল কো-অপারেটিভ এলাকায় সন্ধ্যায় প্রথমে মোটরবাইকের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে, তার পরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এক বৃদ্ধার গলার হার ধরে টান দেয় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু হার না ছেঁড়ায় তারা পালিয়ে যায়। সেই সন্ধ্যাতেই লাগোয়া মাতঙ্গিনী হাজরা লেনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করার সময়ে এক শিক্ষিকার হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। তিনি সতর্ক হয়ে সরে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা থাপ্পড় দেয় তাঁর গালে।

পুলিশের অবশ্য দাবি, এর পিছনে কোনও চক্র নেই। বিক্ষিপ্ত ভাবে দুষ্কৃতীরা এই সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে। টহলদারিতে সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগিয়ে এই দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশ্বাস পুলিশের।

snatching durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy