পুনরুদ্ধার: এই ফ্ল্যাটেই চলে পুলিশি অভিযান। ছবি: শৈলেন সরকার
ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে জাঁকিয়ে বসেছিল এক ব্যক্তি ও তার দলবল, এই অভিযোগ পেয়ে বুধবার রাতে তা দখলমুক্ত করে ‘সিল’ করে দিল পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এক বছরেরও বেশি সময় আগে তাঁর ছেলে ও ভাইপোকে অপহরণ করে কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তি। ব্যবসায়ীর আরও অভিযোগ, তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে জমিও তার সংস্থার নামে লিখিয়ে নেয় কৃষ্ণেন্দু।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার হিরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী প্রয়াগ যাদব। অভিযোগে তিনি জানান, ২০১৬-র অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় ছেলে ও ভাইপো রাধানগর রোড এলাকার একটি মন্দিরে পুজো দিতে যান। পুজো দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় ডলি লজ এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু ও তার দলবল ওই দু’জনের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে স্থানীয় একটি ক্লাব ঘরে নিয়ে যায়। অভিযোগ, তাদের বেধড়ক মারধরও করা হয়। এর পরে লোক মারফত খবর পাঠিয়ে তাঁকে ওই ক্লাবে ডেকে পাঠানো হয় বলে দাবি প্রয়াগবাবুর।
ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘কৃষ্ণেন্দু ও তার লোকজন আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কারখানার জমি ওর সংস্থার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। না হলে তিন জনকেই গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে বড়তোড়িয়া মৌজার অন্তর্গত গোপালপুরের ৪০ কাঠা জমিটা লিখে দিই’’। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই জমির বর্তমান বাজারদর প্রায় তিন কোটি টাকা। ওই ঘটনার দিন কয়েক বাদে বার্নপুর রোড লাগোয়া একটি বহুতলের আবাসনের প্রায় ২৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট থেকে ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারকে উৎখাত করে তার কব্জা নেয় কৃষ্ণেন্দু ও তার দলবল। কিন্তু এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পরে কেন অভিযোগ করা হল? যদিও ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘এত দিন আতঙ্কে মুখ খুলতে পারিনি। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই আর পারলাম না। শেষমেশ পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
এই ঘটনার নেপথ্যে ব্যবসায়িক কোনও গোলমাল রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রয়াগবাবু ইস্কো-সহ নানা স্টিল প্ল্যান্ট থেকে ‘হার্ড কোক’ কিনে অন্যত্র বিক্রি করেন। ২০১১ সালে ইস্কো থেকে হার্ড কোক কিনে একই কারবারে নামে কৃষ্ণেন্দুও। প্রয়াগবাবুর দাবি, ‘‘প্রথমে কৃষ্ণেন্দু ইস্কোর কয়লা কিনে আমাকেই বিক্রি করতো। কিন্তু মাসখানেক বাদেই আমাকে এই কারবার থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। টাকাপয়সা নিয়ে অহেতুক গোলমাল করতো। শেষমেশ খুনের হুমকি দিয়ে জমি, বাড়ি, সবই কব্জা করে।’’
তবে বৃহস্পতিবার এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাসের যদিও দাবি, ‘‘অভিযোগ পেয়ে বুধবারই ফ্ল্যাটটি পুনরুদ্ধার করে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। তা ওই ব্যবসায়ীকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ওই ফ্ল্যাটে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলত বলে জানা গিয়েছে। জমি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তারা দ্রুত
ধরা পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy