এই বাড়িতেই থাকতেন মহম্মদ এবরার। ছবি: শৈলেন সরকার
রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুই বন্ধু। সারা রাত কেউই ফেরেননি। খোঁজ শুরু হয় পরের দিন সকাল থেকে। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে খানিক দূরে স্টেশনের কাছে মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় দু’জনেরই দেহ।
১৯৯২ সালের ৩০ অগস্ট আসানসোল রেলপা়ড় এলাকার বছর পঁচিশের দুই যুবক মহম্মদ এবরার ও মহম্মদ মুলতানের দেহ উদ্ধার হয় স্টেশনের অদূরে লোকো ইয়ার্ডের কাছে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করে এবরারের পরিবার। পাঁচ জন ধরাও পড়ে। কিন্তু বাকিরা অধরাই রয়ে যায়। চব্বিশ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও কিনারা হয়নি এই জোড়া খুনের মামলার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে আসানসোল রেল ইয়ার্ডকে কেন্দ্র করে অবৈধ লোহা কারবার চলত রমরম করে। সেই কারবারের রাশ ছিল মহম্মদ কুরবানের হাতে। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, এবরাররা ছিলেন কুরবানের এই কাজকর্মের বিরোধী। সেই বছর ২৯ অগস্ট রাতে পুরসভা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালায়। পড়শি মুলতানের সঙ্গে তা দেখতে বেরোন এবরার। তার পরেই নিখোঁজ হয়ে যান দু’জন।
এলাকার বাসিন্দারা দু’জনকে খুঁজে বের করার দাবিতে থানা ঘেরাও করেন। পুলিশ সন্ধ্যায় লোকো ইয়ার্ডের কাছে মাটি খুঁড়ে এবরার ও মুলতানের দেহ উদ্ধার করে। তার পরেই এলাকায় অশান্তি তৈরি হয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েক জন পুলিশকর্মী জখমও হন। এবরারের বাবা রহমত আলি আসানসোল উত্তর থানায় কুরবান-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন।
•১৯৯২ সালের ২৯ অগস্ট রাতে নিখোঁজ আসানসোল রেলপাড়ের বছর পঁচিশের দুই যুবক মহম্মদ এবরার ও মহম্মদ মুলতান।
• পরের সন্ধ্যায় আসানসোল স্টেশনের কাছে লোকো ইয়ার্ডে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার দু’জনের দেহ।
• ঘটনায় অভিযুক্ত ১৪। গ্রেফতার করা হয় পাঁচ জনকে। অধরাই রয়ে যায় ৯ জন। তাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত মহম্মদ কুরবানের মৃত্যু হয়েছে।
• চার্জশিট জমা পড়েছিল। কিন্তু মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।
পুলিশ পর দিনই চার জনকে গ্রেফতার করে। পরে ধরা পড়ে আরও এক জন। কিন্তু কুরবান-সহ ৯ জন অধরাই রয়ে যায়। ধৃতেরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। পুলিশ ১৯৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৪ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দেয়। অভিযুক্ত ৯ জনকে পলাতক দেখানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরে মূল অভিযুক্ত কুরবান খুন হয়ে যায়। বাকি আট জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও কেউ ধরা পড়েনি। আদালতে সাক্ষ্যও শুরু হয়নি।
এবরারের বাবা রহমত আলির মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে এখন রয়েছেন এবরারের বৌদি নাসিবা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘সুবিচার এক দিন নিশ্চয় হবে, সেই আশায় রয়েছি।’’ তাঁদের পিছনের বাড়িতেই থাকতেন মুলতানরা। কিন্তু পরিবারটি অন্যত্র চলে গিয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, অভিযুক্তদের কেউ-কেউ এখনও এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরেনি।
অভিযুক্তদের আইনজীবী স্বপন মুখোপাধ্যায়ও দুষছেন পুলিশকে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার মক্কেলরা নির্দোষ। পুলিশ ওদের ধরলেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওরা নির্দোষ প্রমাণ হয়ে যাবেন। পুলিশ গড়িমসি করায় মামলাটি ঝুলে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy