Advertisement
E-Paper

বারবার বোমা-গুলির লড়াই, অতিষ্ঠ দুই গ্রাম

আপাত দৃষ্টিতে গোলমাল নেই ব্লকের অন্য এলাকায়। কিন্তু গোটা কেতুগ্রামের মধ্যে যেন এক টুকরো দ্বীপের মতো অশান্তি নিয়ে বেঁচে রয়েছে বামুনডিহি-খলিপুর। বোমাবাজি আর গুলির লড়াই থামার নাম নেই সেখানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৯

আপাত দৃষ্টিতে গোলমাল নেই ব্লকের অন্য এলাকায়। কিন্তু গোটা কেতুগ্রামের মধ্যে যেন এক টুকরো দ্বীপের মতো অশান্তি নিয়ে বেঁচে রয়েছে বামুনডিহি-খলিপুর। বোমাবাজি আর গুলির লড়াই থামার নাম নেই সেখানে।

শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায়-দফায় বোমাবাজি হল ওই দুই গ্রামে। শনিবার গভীর রাতে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ৬৩টি বোমা, ছড়রা উদ্ধার করেছে। পাঁচ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কেতুগ্রাম থানার এসআই সৈকত মন্ডল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পাঁচ ধৃত-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের দু্‌ই গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রাম দখলের লড়াইকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তিতে ভুগছে ওই দুই গ্রাম। প্রায় দিনই বোমাবাজি ও গুলির আওয়াজে সাধারণ বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত। দিনেও সুষ্ঠু ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও তাদের ভূমিকা ‘নিষ্ক্রিয়’। তাই এলাকায় শান্তি ফিরছে না।

তৃণমূলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীরও অভিযোগের তির সেই পুলিশের দিকে। দলের কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের বক্তব্য, “বহিরাগত দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়ে গ্রামে আক্রমণ করছে। পুলিশকে বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” এলাকার রাজনীতিতে জাহের-বিরোধী হিসেবে পরিচিত সাউদ মিঞারও ক্ষোভ, “পুলিশ ব্যবস্থা তো নিচ্ছেই না, উল্টে আমার গ্রাম বামুনডিতে তৃণমূলের অফিস ভাঙচুর করেছে তারা। দলের নেতাদের সব জানিয়েছি।” সব শুনে জেলার এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, “আমরা ঠিক কাজ করছি বলেই তো তৃণমূলের নেতারাও আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। ওই এলাকায় শান্তি ফেরানোর জন্য লাগাতার তল্লাশি চালানো হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাম আমল থেকেই ওই দুই গ্রামে দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ ছিল। বাইরে থেকে আসা দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থলও ছিল এই গ্রামগুলি। আর সে কারণে অশান্তি লেগেই থাকত। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার পরেও ওই দুই গ্রামের চিত্র বিশেষ পাল্টায়নি। ২০০৯ সালের পর থেকে যে লড়াই সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে ছিল, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে সেই লড়াই কার্যত দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে। যার জেরে গত দু’বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ হয়ে রয়েছেন দুই যুবক। এর সঙ্গে রয়েছে বিরোধী শিবিরের লোকজনকে গ্রামে ঢুকতে বা থাকতে না দেওয়ার অভিযোগও। এ সবের জেরে অশান্তির মাত্রা বাড়তে থাকে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার নেতা সাউদ মিঞা-ঘনিষ্ঠ নেতা আপেল শেখের জন্য তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী দীর্ঘদিন গ্রাম ছাড়া ছিল। গত ২২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কোমরপুর হাটতলার কাছে বেণীনগর মোড়ের কাছে নিজের সাবমার্সিবল পাম্পের ঘরে খুন হন আপেল। তার পরেই আপেল-বিরোধীরা খলিপুর গ্রামে ঢুকে পড়েন। আর আপেল-ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জন গ্রাম ছাড়া হন। পুলিশ জানায়া, শুক্রবার ভোরে ওই গ্রামছাড়া বাসিন্দারা গ্রামে ঢুকতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়। শ’খানেক বোমা পড়ে। শনিবার দুপুরে গ্রামছাড়ারা স্থানীয় এক যুবককে তুলে নিয়ে গেলে ফের দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়।

বারবার এই গোলমালের জেরে ওই দুই গ্রাম তো বটেই, কেতুগ্রামের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র কোমরপুর হাটতলাতেও তার প্রভাব পড়ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁরা জানান, দুষ্কৃতী হোক বা পুলিশ, সবাই কোমরপুর হাটতলা ধরেই যাতায়াত করে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকেন। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “পুলিশকে কড়া হাতে এ সব দমন করতে বলা হয়েছে।”

Political clash villages ketugra bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy