Advertisement
০৭ মে ২০২৪

জীর্ণ বা়ড়িতেই বসবাস, বিপদ বর্ষায়

কোনওটির পাঁচিল ধসে যাচ্ছে। কোথাও সামান্য বৃষ্টির পরেই বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়ছে। আসানসোলে জীর্ণ নানা বাড়ি এমনই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিন-দিন। বাড়িগুলি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন শহরবাসী।

সম্প্রতি আসানসোলের ধাদকায় ভেঙে পড়ে একটি বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি আসানসোলের ধাদকায় ভেঙে পড়ে একটি বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

কোনওটির পাঁচিল ধসে যাচ্ছে। কোথাও সামান্য বৃষ্টির পরেই বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়ছে। আসানসোলে জীর্ণ নানা বাড়ি এমনই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিন-দিন। বাড়িগুলি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন শহরবাসী। পুরসভা জানায়, শহর জুড়ে জীর্ণ আবাসন চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কয়েকটি ভেঙে ফেলার কাজে হাত দেওয়া হবে।

আসানসোলের রেলপাড় এলাকায় সম্প্রতি কাকভোরে একটি দোতলা বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। বাড়ির উপরের তলায় কেউ না থাকলেও নীচে একটি দোকান ছিল। ভেঙে পড়ার সময়ে দোকান বন্ধ থাকায় কেউ হতাহত হননি। তবে এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়িটি বহু দিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। নিয়মমতো সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি দিন কয়েক প্রবল বৃষ্টিতে নড়বড়ে বাড়িটি ভেঙে পড়ে। বৃহস্পতিবার পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বকবাঁধি এলাকাতেও একটি পুরনো জীর্ণ দোতলা বাড়ি ভেঙে পড়ে। বাড়ির দশ জন সদস্য তখন ঘরে না থাকায় বেঁচে যান। পরে পুরসভার তরফে বাড়ির ভেঙে যাওয়া অংশ সাফ করা হয়। এই ঘটনার পরেই নাগরিকদের তরফে শহরের বসতি এলাকায় জীর্ণ আবাসনগুলি চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলার দাবি উঠেছে। বাসিন্দারা জানান, টানা বৃষ্টির ফলে এই বাড়িগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যাঁরা বাস করছেন তাঁরা তো বটেই, বাড়িগুলি ভেঙে পড়লে আশপাশের মানুষজনেরও জীবন সংশয় হতে পারে।

শহরের জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ার তালিকায় রেলপাড়ের ঘটনাই প্রথম নয়। বছর তিনেক আগে দুর্গাপুজোর নবমীতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আসানসোল বাজার লাগোয়া একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয় এক আবাসিকের। আহত হন কয়েকজন। তারও কয়েক বছর আগে দিন কয়েকের ব্যবধানে কুলটি লিথুরিয়া রোড ও আসানসোল রেলপাড় এলাকার দু’টি দোতলা বাড়ি ভেঙে পড়ে। আসানসোল পুর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরলে একাধিক জীর্ণ বাড়ি দেখা যায়। আসানসোল বাজার এলাকাতেই প্রায় ৫০টি এই রকম বাড়ি আছে। বরাকর, কুলটি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া অঞ্চলেও রয়েছে এমন সব বাড়ি।

পরপর জীর্ণ বাড়িতে দুর্ঘটনায় নড়ে বসেছে পুরসভাও। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা শহরের জীর্ণ আবাসন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে পুর এলাকায় প্রায় তিনশো বাড়ি চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া আছে তা আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হয়েছে। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, এ বার থেকে প্রতিটি বরো এলাকায় বাস্তুকার পাঠিয়ে চিহ্নিত করা পরিত্যক্ত বাড়িগুলির মালিকদের ডেকে শুনানি হবে। তার পরে পনেরো দিনের মধ্যেই বাড়ি ভাঙার কাজে হাত পড়বে।

শুধু ব্যক্তিগত বাড়িই নয়, বহু সরকারি আবাসনেরও এক হাল। কোনওটিতে মানুষজন বাস করছেন, আবার কোথাও বাড়িগুলি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। সেল গ্রোথ ডিভিশনের কুলটি কারখানার অধীনস্থ ইন্দিরা গাঁধী কলোনির কয়েকটি তিনতলা আবাসনের অবস্থা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। চাঙড় খসে পড়েছে। আবাসনের অনেকটা অংশই শূন্যে ঝুলছে। সেই অবস্থাতেই বাস করছেন কেউ-কেউ। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা অনেক দিন আগেই আবাসনগুলি পরিত্যক্ত ঘোষনা করেছেন। যাঁরা বাস করছেন তাঁরা দখল করে রয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন।

মেয়র জিতেন্দ্রবাবু জানান, এই বিষয়ে খোঁজ নেবেন। আসানসোলের রেলপাড় এলাকায় বেশ কিছু রেলের পরিত্যক্ত আবাসন আছে। সেগুলি ভেঙে ফেলার জন্য কর্মীদের সরানো হয়েছে। কিন্তু এলাকার কিছু লোক ফাঁকা আবাসনগুলি দখল করে রেখেছেন। বহিরাগতদের উঠে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dangerous condition House Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE