গত বছরের তুলনায় এ বার রাজ্যে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, ফলনও ভাল হবে বলে মনে করছেন কৃষি-কর্তারা। আবার, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যের হিমঘরগুলিতে প্রায় দেড় লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। গত বছর রাজ্যের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর বিষয়ে কড়াকড়ি করেছিল রাজ্য সরকার। তাই এ বার ফলন যদি বাড়ে এবং সরকার ফের তেমন কড়াকড়ি করে, সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা আলু ব্যবসায়ীদের। তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিক সরকার।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বার প্রায় ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১ কোটি টন। এ বার প্রায় ৫ লক্ষ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর, হুগলিতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও, চাষের এলাকা বেড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তরবঙ্গে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, আলু চাষের এলাকা আরও কিছুটা বাড়বে।’’
চাষের এলাকা বাড়ল কেন? রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, এক দিকে, আলুর ভাল দাম পেয়েছিলেন কৃষকেরা। আবার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চাষিরা ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। আলুর বিমা করানোর জন্য কৃষকদের কোনও অর্থ দিতে হচ্ছে না। সে কারণে তাঁরা এই অর্থকরী ফসল চাষে উৎসাহী হয়েছেন, মনে করছেন মন্ত্রী। কৃষি দফতরের একাংশের দাবি, গত মরসুমেও প্রথমে প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন চাষিরা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেকের চাষ নষ্ট হয়। তার পরে আর আলু না ফলিয়ে, বিকল্প চাষে ঝুঁকেছিলেন চাষিদের অনেকে। তাই এলাকা কিছুটা কমে। গত বছর বিভিন্ন এলাকায় আলুবীজ ও সারের কালোবাজারির অভিযোগও উঠেছিল। এ বার তা তেমন ওঠেনি। ফলে, বীজ ও সার পেতে চাষিদের ভুগতে হয়নি।
গত মরসুমের শেষ দিকে আলু রফতানি নিয়ে সরকার কড়া পদক্ষেপ করেছিল। তার জেরে এখনও হিমঘরে প্রায় দেড় লক্ষ টন আলু পড়ে রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এ বার আবহাওয়া ভাল রয়েছে। আলুর ফলন বাড়বে। কয়েক দিন পরেই নতুন আলু বাজারে আসা শুরু হবে। এখনই ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো নিয়ে সরকার নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিক।” সংগঠনের সভাপতি জগবন্ধু মণ্ডলের প্রশ্ন, “যত আলু উৎপাদন হয়, সবটা আমাদের রাজ্যে প্রয়োজন হয় না। বাইরে পাঠাতে না দিলে চাষিরা দাম পাবেন কী করে?”
রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “অন্তত ২০ শতাংশ ফলন বেশি হবে বলে ধরে নিচ্ছি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)