Advertisement
১৯ মে ২০২৪

দেওয়াল কেটে চম্পট দিল টনটন

পুলিশ জানিয়েছে, টনটন মিশ্র বিহারের জামুই জেলার লক্ষ্মীপুর থানার আকমপুরের বাসিন্দা। শিল্পাঞ্চলে কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত সে। গত ৪ এপ্রিল কুলটির নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ তাকে গাঁজা সমেত গ্রেফতার করে।

পগারপার: আদালতের শৌচাগারে এই গর্ত করেই কেটে পড়ে টনটন। —নিজস্ব চিত্র।

পগারপার: আদালতের শৌচাগারে এই গর্ত করেই কেটে পড়ে টনটন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

আদালতের লকআপে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই শৌচাগারে যান বন্দি। বাইরে ততক্ষণে হট্টগোল জুড়ে দিয়েছেন অন্য অভিযুক্তেরা। অভিযোগ, সেই সুযোগে শাবল দিয়ে শৌচাগারের দেওয়ালে গর্ত করে পালায় ওই বন্দি।

কিছুক্ষণ পরে শৌচাগারে গিয়ে ওই গর্ত নজরে আসে অন্য এক বন্দির। তিনি অবশ্য সেই ফাঁক গলে না পালিয়ে বাইরে এসে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। শুরু হয়ে যায় হৈ চৈ। শুক্রবার অস্ত্র ও মাদক পাচারে অভিযুক্ত টনটন মিশ্রের পালানোয় ফের বর্ধমান আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আগেও অভিযুক্ত পালিয়েছে এই আদালত থেকে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “বন্দি পালানোর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই আসামীর ছবি আমরা বিভিন্ন থানায় পাঠিয়েছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, টনটন মিশ্র বিহারের জামুই জেলার লক্ষ্মীপুর থানার আকমপুরের বাসিন্দা। শিল্পাঞ্চলে কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত সে। গত ৪ এপ্রিল কুলটির নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ তাকে গাঁজা সমেত গ্রেফতার করে। মাদক কারবারের মামলা থাকায় অন্ডাল থানাও জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেরার মধ্যেই খাস কাজোড়া এলাকার ইসিএলের পরিত্যক্ত আবাসনের ভিতর লুকিয়ে রাখা একটি বিদেশি অস্ত্র, ৬টি ম্যাগজিন, ৬টি নাইনএমএম কার্তুজ ও পিস্তল পুলিশের হাতে তুলে দেয় টনটন। অন্ডাল থানায় পৃথক মামলা দায়ের হয়। ওই দুটি মামলাতে‌ই জেলে ছিল টনটন। বর্ধমানে মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে শুনানি চলছিল তার।

তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও জেল থেকে পালানোর ‘রেকর্ড’ রয়েছে টনটনের। পুলিশ জানায়, বছর তিনেক আগে বিহারে আদালতের ভিতর আসামীর এজলাস থেকে পুলিশকে বোকা বানিয়ে কেটে পড়ে সে। ঘাঁটি গাড়ে বিহার ছেড়ে আসানসোলে। আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “বিহার ও ঝাড়খণ্ডে খুন ও অস্ত্র পাচারের মামলা রয়েছে টনটনের বিরুদ্ধে। সে সুপারি কিলার হিসেবেও কাজ করে।”

এ দিন মাদক সংক্রান্ত মামলার ছয় বন্দিকে সকাল ১০টা নাগাদ বর্ধমান আদালতে নিয়ে আনা হয়। তার ঘন্টা দু’য়েক পরে এক বন্দি শৌচাগারের ১০ ইঞ্চি দেওয়াল বড় করে কাটা রয়েছে বলে হাজতের ইনচার্জকে জানায়। পুলিশ শৌচাগারের ভিতর থেকে লোহার শাবল উদ্ধার করে। ওই শাবল হাজতের ভেতর এল কী ভাবে, সে প্রশ্নও উঠছে। কয়েকজন বন্দি জানিয়েছেন, হাজতে ঢোকার মিনিট পনেরোর মধ্যেই শৌচাগারে যায় টনটন। তখন টনটনের ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তেরা হাজতের ভিতর চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। সেই সুযোগে শৌচাগারের ভিতর শাবল দিয়ে দেওয়াল কেটে কেটে পড়ে সে।

পুলিশ কর্মীদের দাবি, চিৎকার-চেঁচামেচির জন্য তাঁরা কোনও আওয়াজ শোনেনি। তা ছাড়া দেওয়াল কেটে বন্দি পালাবে এটাও মাথায় ছিল না। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাজতের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বেশ কয়েকমাস ধরে খারাপ। ফলে আসামীদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে পারছে না পুলিশ। তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

ভরা আদালতের ভিতর দিয়ে দেওয়াল গর্ত করে এক জন বন্দি কী ভাবে বেরিয়ে পালাল, কারও চোখে পড়ল না— উত্তর খুঁজছে পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prison Cell Lock up লকআপ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE