ফাইল চিত্র।
সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে নানা সমস্যা। আর সেই ‘সুযোগে’ আসানসোল মহকুমার নানা প্রান্তে গত এক দশকে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বেসরকারি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুল। সেই সব স্কুলগুলিতে পড়়ুয়া ভর্তি হচ্ছে ভালই। কিন্তু এই স্কুলগুলির ক্ষেত্রে সমস্যা অন্য। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের মতে, এই স্কুলগুলির বেশির ভাগই চলছে কোনও রকম নিয়ম না মেনে। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা।
সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একটি বড় অংশের বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, পড়ুয়াদের নিরাপত্তায় এই সব জায়গায় একেবারেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সম্প্রতি সালানপুরের একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির এক পড়ুয়ার নিগ্রহের ঘটনা সেই বিষয়টিকেই সামনে এনেছে। বিডিও (সালানপুর) তপনকুমার সরকার জানান, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই স্কুলে সরকারি নানা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।
কী ধরনের সমস্যা? জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক জানান, বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল খোলার আগে জেলা শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা দফতর আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম পালনের নির্দেশ দেন। সেই সব নিয়মাবলি ঠিক ভাবে পালন করা হলে, তবেই জেলা শিক্ষা দফতর রাজ্য সরকারকে সবুজ সঙ্কেত দেয়। এর পরেই আবেদনকারী স্কুল খোলার অনুমতি পান। নিয়মগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, স্কুল ভবনের পরিকাঠামো, পড়ুয়ার পর্যাপ্ত বসার জায়গা, উপযুক্ত মানের শৌচাগার, পড়ুয়াদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এমনকি, কোনও আবেদনকারী যদি পশ্চিমবঙ্গ বাদে অন্য কোনও রাজ্য বা সর্বভারতীয় বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে স্কুল খুলতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্রের জন্য আর্জি জানাতে হয়।
অথচ, কুলটি, সালানপুর, বার্নপুর বা আসানসোল শহর-সহ মহকুমার নানা প্রান্তে গজিয়ে ওঠা স্কুলগুলির ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলি ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে না বলে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান। অভিভাবকদের একাংশের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়টি সব থেকে অবহেলিত থাকছে।
যদিও সালানপুরের ঘটনাটি সামনে আসার পরেই জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিক উদয়নবাবু জানান, বিজ্ঞপ্তি জারি করে বেসরকারি সমস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা করা ও অনুমোদন সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পড়ুয়াদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকাররে তৈরি করা তিনটি কমিটির কাজকর্মও কঠোর ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত
গৃহীত হয়েছে।
শিক্ষা দফতর জানায়, প্রতিটি জেলায় একটি চিলড্রেনস সেফটি ও সিকিউরিটি কমিটি থাকে, যাঁরা সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে। একটি ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন কমিটি থাকে, যার কাছে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের যাবতীয় তথ্য থাকে। আর থাকে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ইনস্পেকশন টিম। এই টিমের সদস্যদের কাজ নিয়ম করে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শন করে অনিয়ম ধরা ও প্রয়োজনে নিয়ম পালনে বাধ্য করা। তবে ইতিমধ্যেই জেলার একাধিক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর নির্দেশিত নিয়মাবলি মানতে শুরু করেছে বলে প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানান। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy