E-Paper

গুলিতে মৃত ছাত্র, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন শিল্পাঞ্চলে 

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘরের কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আদিত্য মণ্ডল (১৯) নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৮
হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছাত্র।

হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছাত্র। নিজস্ব চিত্র।

প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন। কখনও ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে পর পর গুলি। আবার কখনও গুলি করে ছিনতাই। গত এক বছরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে প্রকাশ্যে গুলি চলার ঘটেছে গোটা দশেক। অনেকগুলির কিনারা করেছে পুলিশ। তবে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপাদাপির ঘটনা বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে হিরাপুরের ধ্রুবডাঙালের ঘটনাই তারই প্রমাণ। এই পরিস্থিতিতে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, অপরাধ কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘরের কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আদিত্য মণ্ডল (১৯) নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। অভিযোগ, সেখানে ওই সময় স্থানীয় কয়েক জন যুবক নিজেদের মধ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কাড়াকাড়ি করছিলেন। হঠাৎই তা থেকে একটি গুলি ছিটকে আদিত্যর ডান চোখ ফুঁড়ে মাথার পিছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। আসে হিরাপুর থানার পুলিশ। এসিপি (হিরাপুর) ঈশিতা দত্তও পৌঁছন। স্থানীয়েরাই তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। যদিও পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শুক্রবার রাতে আনমল সিংহ নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত গণেশ সাও-এর খোঁজ চলছে। আগ্নেয়াস্ত্রটি গণেশের বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে শিল্পাঞ্চলের কোনও থানায় দুষ্কৃতীমূলক কাজের অভিযোগ নেই। কিন্তু কী ভাবে ও কী কাজের জন্য সে আগ্নেয়াস্ত্র রেখেছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, বৃহস্পতিবার রাতে গণেশ বাড়ি থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় এসেছিল। এসিপি (হিরাপুর) ঈশিতা দত্তের দাবি, নিছকই কৌতূহল বসত ওই যুবকেরা আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে নাড়াচড়া করার সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। খুন করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে পালিয়েছে গণেশ।

মৃতের মা নির্মলা মণ্ডল জানান, তাঁর ছেলে স্থানীয় একটি সাইবার ক্যাফেতে কাজ করেন। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে কাজ থেকে ফিরে বাড়ি লাগোয়া একটি পাঠাগারের কাছে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে। তার পরে বাড়ি ফেরেন। বৃহস্পতিবারও তিনি বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। ঘটনার মিনিট দশেক আগেও ছেলের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়েছে। পরে ছেলের এক বন্ধু ঘটনার কথা জানিয়ে তাঁকে ফোন করেন।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে আগ্নেয়াস্ত্রটি কোথা থেকে এল, কী কাজের জন্য অভিযুক্ত নিজের কাছে রেখেছিল? সরব হয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা নেই বলে এমন ঘটনা ঘটেছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, ঘটনার পরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশের অনুমান, কয়েক দিন আগে গণেশ বিহারে গিয়েছিল। সেখান থেকেই আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে এসে থাকতে পারে। ডিসিপি (পশ্চিম) সন্দীপ কাররা বলেন, “আমরা জানার চেষ্টা করছি ওই আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে, কী জন্য আনা হয়েছিল।” তবে পুলিশেরর অনুমান, ওই যুবক অবৈধ অস্ত্র কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তার সঙ্গে অন্তঃরাজ্য কোনও অবৈধ অস্ত্র কারবারি চক্রের যোগ আছে কি না, তা-ও খোঁজ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hirapur Asansol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy