রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত রঞ্জিৎ মুর্মু। দুর্গাপুরের বিধাননগর লাগোয়া স্টিল পার্কে। ছবি: বিকাশ মশান
তৃতীয় লিঙ্গের (এলজিবিটি) প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বুথ কমিটির আহ্বায়কের। দুর্গাপুরে সিপিএমের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, প্রান্তিক ওই জনগোষ্ঠীর দাবিগুলি সমাজে আরও জোরের সঙ্গে তুলতে সাহায্য করবে এই সিদ্ধান্ত।
দুর্গাপুরের এফসিআই বস্তিতে থাকেন রঞ্জিৎ মুর্মু। বছর দেড়েক আগে তাঁকে সদস্য পদ দিয়েছে সিপিএম। সম্প্রতি রঞ্জিৎকে ফার্টিলাইজার গেট বস্তি বুথের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের তরফে। পঞ্চম শ্রেণির পরে, অর্থাভাবে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি, সামাজিক কাজেও যুক্ত পেশায় রাজমিস্ত্রি রঞ্জিৎ। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘রঞ্জিৎ দায়িত্বশীল এক পার্টিকর্মী। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি। দলের একটি বুথ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে তাঁকে।’’
স্টিল পার্ক এলাকায় সোমবার বিকেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন বছর তেতাল্লিশের রঞ্জিৎ। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। বছর কুড়ি আগে মা-কে। সংসার চালাতে তাঁর মা-ও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর কাছেই কাজ শিখেছেন রঞ্জিৎ।
দুর্গাপুরে সিপিএমের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রায়ই দেখা যায় রঞ্জিৎকে। তিনি বলেন, ‘‘পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। পার্টির মাধ্যমেই মানুষের পাশে থাকি। তাঁদের দাবি পূরণে কাজ করি। লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থীরা বরাবরই সামনের সারিতে থাকেন।’’ রঞ্জিতের প্রতিবেশী শিখা গুপ্ত বলেন, ‘‘বিপদে-আপদে রঞ্জিৎকে সব সময় পাশে পাওয়া যায়।
তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে বরাবরই জাতীয় রাজনীতিতে সরব বামপন্থীরা। বিভিন্ন বামপন্থী গণ সংগঠনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি রয়েছেন। কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক এক শাখা রয়েছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের। এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি থেকে সদ্য অব্যাহতি পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি অপ্রতিম রায়। তিনিও সিপিএম সদস্য। দল রঞ্জিৎকে বুথ কমিটির আহ্বায়ক করেছে শুনে অপ্রতিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কলকাতায় আমরা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংগঠন গড়ার চেষ্টা করছি। দলের জেলা সম্মেলনে এ নিয়ে একটি প্রস্তাবের উপরে আমি আলোচনা করব।’’
বিধানসভা ভোটের আগে, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের এক সংগঠনের ডাকা সভায় বক্তৃতা করেছিলেন সিপিএম নেত্রী কণীনিকা বসু (ঘোষ)। তিনি বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সাহসী এবং বলিষ্ঠ। এতে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন গণসংগঠনে যুক্ত করার কাজে গতি আসবে।’’
সিপিএমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রূপান্তরকামী ও বৃহন্নলাদের নিয়ে কাজ করে, কলকাতার এমন একটি সংগঠনের প্রধান তথা রাজ্যের ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত রাজনৈতিক দলের নেতা বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি— কেউই এ ধরনের মানুষের খবর বিশেষ একটা রাখেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দাবি জায়গা পায় না। সেখানে এটা ব্যতিক্রম।’’
(তথ্য সহায়তা: রাজীব চট্টোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy